মরণব্যাধি করোনাভাইরাস স্থবির করে দিয়েছে মানুষের জীবন চাঞ্চল্য। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্ত দেশ সহ বাংলাদেশেও এর আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ায় সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন পার্ক গুলি দর্শনার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।
দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমন মুহূর্তে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া নীলকুঠি জেলা প্রশাসক ইকোপার্ক দর্শনার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদেরকে তাদের ব্যবসা না তার জন্য বলা হয়।
করোনা ভাইরাস এর শুরু থেকে এ পর্যন্ত দর্শনার্থীর মুখ দেখতে পাইনি ইকোপার্কের ব্যবসায়ীরা। গাছপালা আর বিনোদনের সরঞ্জামাদি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। শিশুদের জন্য বিনোদনের নির্মিতব্য রাইডার গুলি নষ্টের পথে। জং ধরে গেছে লোহালক্কর দিয়ে তৈরি খেলা সরঞ্জামাদি। মরিচা ধরে গেছে শিশু বিনোদনের একমাত্র ট্রেনের। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গাংনী সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই পার্কে ব্যবসার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক রাইট তৈরি করে।
নির্মাণ করা হয় আজব গুহা। আইসল্যান্ড সহ অনেক কিছুই। এসকল নির্মাণের পেছনে করা হয় লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত অর্থ। পহেলা বৈশাখ ও দুটি ঈদসহ বিশেষ বিশেষ দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জমে। বছরে ২-১ দিনের ব্যবসায়ী এখানকার ব্যবসায়ীরা টিকে থাকেন। কর্মচারীর বেতন ভাতা দিয়ে হয়তোবা অবশিষ্ট থাকে কিছু লভ্যাংশ।
এক্ষেত্রে সরকারকে দিতে হয় বাৎসরিক মোটা অংকের টাকা রাজস্ব। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ইকোপার্কে দর্শনার্থী না আসতে দেওয়াই ব্যবসায়ীরা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফুরিয়ে গেছে ইকোপার্কের প্রাণচাঞ্চল্য জৌলুস। ব্যবসায়ী ইয়ারুল ইসলাম জানান তার আজব গুহা সহ বিভিন্ন রাইট তৈরিতে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।উক্ত টাকা তিনি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা তে ঋণ নিয়ে এবং স্থানীয় মানুষের সাথে ধারদেনা করে ইকোপার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে দীর্ঘদিন যাবত দর্শনার্থী না থাকায় তিনি আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে উঠেছেন।
দর্শনার্থী না আসলে তিনি আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়বেন । পাওনাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে পারলে ভিটেমাটি ছাড়তে হতে পারে। আইসল্যান্ড মালিক জয়নাল আবেদীন জানান তিনি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ইকোপার্ক এর একপাশে আইসল্যান্ড নির্মাণ করেছেন। পহেলা বৈশাখসহ দুটি ঈদে ব্যবসা করে কিছু টাকা আয় করার জন্য আশায় বুক বেঁধেছিলেন।
কিন্তু সর্বনাশা করোনাভাইরাস তার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। তিনিও ধারদেনা করে এ কাজে হাত দিয়েছিলেন। দর্শনার্থী না আসলে তিনি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে উঠবেন। ট্রেন ও দোলনা ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, সরকারকে বাৎসরিক যে টাকা দিতে হয় সে টাকা বছরের শুরুতেই দেয়া হয়ে গেছে। এদিকে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস হয়ে গেল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করণা ভাইরাসের কারণে দর্শনার্থীদের পার্কে।
এখানে তার ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট রয়েছে। বসে বসেই নাইটগার্ড ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় প্রতি মাসে।গত পহেলা বৈশাখে দর্শনার্থী ছিলনা ইকোপার্কে এই দেও হয়তোবা দর্শনার্থীদের ঘোরাফেরার জন্য অনুমোদন নেই। তাই আর্থিকভাবে প্রতি মাসে অনেক টাকা লোকসান যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইকোপার্কে দর্শনার্থীদের আসতে দেয়ার অনুমতি চেয়েছে ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির মুখ থেকে উঠতে চেয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছে। ইকোপার্ক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গাংনী উপজেলা নির্বাহি অফিসার রহমান এর সাথে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মেপ্র/এমএফআর