করোনাভাইরাস আতঙ্কে গোটা বিশ্ব। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী মহামারী। এর কোনো কার্যকর ওষুধ আজও তৈরি হওয়ার সুখবর দিতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার থাবায় রোজ বাড়ছে লাশের সারি। এমতাবস্থায় মনের ভেতর তৈরি হওয়া চাপ যেন কমছেই না।
করোনার ভয়ে অনেকই এখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কেউ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এমতাবস্থায় আতঙ্ক-উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা যেন পিছু ছাড়ছে না। মানসিক চাপ তাড়ানোর উপায় কী?
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলছেন, মানসিক চাপের বিষয়টি ব্যক্তিভেদে আলাদা। যখন কোনো সংকটের মধ্যে আমরা পড়ি, তখন ব্যক্তিগতভাবে আমরা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাই। করোনা নিয়ে ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে সব সময়ের জন্য ভয় যে খারাপ এমন নয়। ভয় অনেক সময় আমাদের সচেতন হতে সাহায্য করে।
তবে উদ্বিগ্নতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন তাদের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
কীভাবে বুঝবেন মানসিক সমস্যা হচ্ছে?
অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগলে মেজাজ খিটখিটে থাকে। যখন-তখন রেগে উঠছেন। অল্প কিছুতেই তারা অনেক বেশি উত্তেজনা প্রকাশ করছেন। তবে কিছু মানুষের মধ্যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ফলে বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা ও শ্বাসে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ঘুমের সমস্যাও হতে পারে।
যেভাবে কাটিয়ে উঠবেন
মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মনোরোগবিদ অধ্যাপক মেখলা সরকার।
তিনি বলেন, সারাবিশ্ব এখন একটি সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাই ভাবতে হবে– আপনি একা নন প্রতিটি মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আপনাকে ভাবতে হবে– সময়টা খারাপ যাচ্ছে। তবে এ অবস্থা কোনোভাবেই স্থায়ী হতে পারে না। এ সমস্যা অবশ্যই কেটে যাবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অনেকে চাপ অনুভব করছেন। এ বিষয়ে মেখলা সরকার বলেন, শারীরিকভাবে অবশ্যই দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে মানসিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজন নেই। পরস্পরের খোঁজখবর নিতে হবে। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
সংকটের সময় অনেক রকম গুজব ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এসব বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
বিশেষ করে সামাজিকমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের তথ্য ঘুরে বেড়ায়। এ ক্ষেত্রে সবার সব ধরনের তথ্য বিশ্বাস করা উচিত হবে না। যাচাই করে সঠিক সংবাদ বিশ্বাস করতে হবে। বই পড়া মানসিক চাপ কমাতে পারে। তাই একা বসে না থেকে বই পড়তে পারেন।
কোয়ারেন্টিনে থাকলে সময়টি কাজে লাগানো উচিত। এ সময় ভালো কয়েকটা বই পড়তে পারেন। পছন্দের সিনেমা দেখতে পারেন, বাসায় বাগান থাকলে বাগানের পরিচর্যাও করতে পারেন। ঘরের সাজসজ্জা করা যেতে পারে।
প্রতিদিন কিছুক্ষণ মেডিটেশন করুন, দেখবেন চাপ কমে গেছে। এ ছাড়া যারা ধর্মীয় আচার ও প্রার্থনা করতে অভ্যস্ত তারা সেগুলো বাড়িয়ে দিন দেখবেন মানসিক চাপ কমে ফুরফুরে লাগছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা