দৃশ্য-০১: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। তাদের একটা অংশ প্রতিবছরের শেষে কিংবা শুরুতে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার জন্যে দীর্ঘায়িত হচ্ছে সে প্রক্রিয়া। করোনা পরিস্থিতি ভাল হলেই তাৎক্ষণিকভাবেই তারা একাডেমিক যোগ্যতা অর্জন করে ফেলবে।
দৃশ্য-০২: আমাদের দেশীয় আয়ের বড় একটা অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। যার সিংহভাগই মিডেল ইস্টে। কিন্তু মিডেল ইস্টের অধিকাংশ দেশই তেলের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আশংকাজনক হারে কমে যাওয়ায় মন্দার কবলে পরতে যাচ্ছে সে সব দেশ। যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার একটা বড় সম্ভবনা রয়েছে। তার ফলাফল ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পারছি। অনেক দেশ থেকেই কর্মীরা ফেরত আসছে, এবং তাদের আবার কর্মস্থলে ফিরে যাবার সম্ভাবনা বা সুযোগ কম।
দৃশ্য-০৩: আইএলও বলছে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ ভাগ চাকরি কমেছে। কমবে আরো বেশি।
দৃশ্য-০৪: বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিজীবীরা বাদে বাকিদের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। বেতন কমছে,কিংবা বকেয়া জমছে কিংবা ছাটাই হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
প্রথম দৃশ্য মতে দেশে অনেক তরুন অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে চেষ্টা করবে। দ্বিতীয় দৃশ্য মতে, দেশে ফেরত আসা অনেক মানুষ বেকার হয়ে চাকরির বা ব্যবসার সন্ধান করবে। তৃতীয় দৃশ্য মতে দেশে চাকরী কমে যাবে। প্রথম তিনটা দৃশ্য যদি আমরা এক সুতায় আনতে চাই, আমরা দেখবো দেশে খুব সহসাই ‘বর্তমান কর্মক্ষম’ মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে কিন্তু সহসাই চাকরি বাড়বে না। তাই অনেক বড় একটা অংশ ব্যবসা করতে আগ্রহী হবে।
ব্যবসায় আগ্রহী হওয়া বড় সংখ্যার মানুষের মূলধন এবং দক্ষতার ঘাটতি দেখা দিবে। আমরা যদি মূলধন নিয়েই কথা বলি, এই করোনায় পারিবারিক আয় ও সঞ্চয় কমছে। তাই আশংকা করা যায়, ব্যবসার জন্য তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভাবেই মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংক বড় একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক বছর ধরেই আমাদের ব্যাংক সেক্টরের অবস্থা ভাল নেই। প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপী ঋণের পরিমাণ, অর্থ পাচার তো আছেই। এর পাশাপাশি সরকার বড় একটা পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংক যদি লোনে সুদের হার বাড়ায় সেক্ষেত্রে নতুন বা ছোট পরিসরে থাকা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। ব্যবসায় রাতারাতি লাভ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া বড় একটা সংখ্যা ব্যবসা শুরু করতে না পেরে বা চাকরি না পেয়ে বা দক্ষতা অর্জন করতে না পেরে যদি অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যায় তাহলে সমাজে ক্রাইমের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অতীত মহামারীর পরে সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়ার ইতিহাস রয়েছে।
আর সমাজে যদি বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়, তাহলে ব্যবসা অনুকূলতা না পেয়ে অনেকেই ব্যবসায় আগ্রহ হারাবে, বাড়বে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। বাজারকে বিশ্বাস করতে না পারলে বিনিয়োগ কমে যায়।
এর মাঝেই দৃশ্যমান হবে চতুর্থ দৃশ্য! বড় একটা অংশ তখন কষ্ট করে হলেও সরকারি চাকরির পেছনে ছুটবে। ৩০ বছর পর্যন্ত চেষ্টা করতে থাকবে, কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে না, এটাও দেশের জন্যে একটা অর্থনৈতিক ক্ষতি।
সম্ভাব্য ফলাফল গুলো ভয়াবহ। আমাদের এখনি সচেতন হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তি, বাজারকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে যাতে বিনিয়োগ বাড়ে। তরুণদের হাতেই গড়ে উঠতে পারে আগামীর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। আবার হতে পারে উল্টোটাও! ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এখনি আমরা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তার উপর।
লেখক: ডেভলপমেন্ট এক্টিভিস্ট, ই-মেইল:rafiuahamed1971@gmail.com