সব বিদেশি কর্মীর করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। দেশটির প্রতিটি প্রদেশে এ কার্যক্রম চলছে ধাপে ধাপে।
সিউল ও গিয়োংগিদো প্রদেশের বিদেশি কর্মীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। অনেকেই এই কর্মসূচিকে বৈষম্যমূলক বিবেচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ৮ মার্চ স্থানীয় প্রশাসন গিয়োংগিদো অঞ্চলে সব বিদেশি কর্মীকে ২২ মার্চের মধ্যে এবং সিউল অঞ্চলের কর্মীদের ৩১ মার্চের মধ্যে করোনভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য একটি নোটিশ জারি করে।
আদেশ অনুসারে এই সময়ে যদি কোনো ব্যক্তি করোনা পরীক্ষায় ব্যর্থ হন; তাকে অবশ্যই তিন মিলিয়ন উয়ন অর্থাৎ (২৬০০ ডলার) পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
পরীক্ষা না করা ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে জরিমানার পাশাপাশি চিকিৎসার সব খরচ বহন করতে হবে।
গিয়োংগিদো প্রদেশে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত সপ্তাহে একই পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। বিদেশি কর্মীদের ৩১ মার্চের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করার আদেশ জারি করে তাদের নিয়োগকারীদের নোটিশ পাঠায় সিউল মহানগর প্রশাসন।
দ. কোরিয়া টাইমসের প্রতিবেদন বলছে— দেশটিতে অবস্থানরত অনেক বিদেশি মনে করেন, ভাইরাসটি সংক্রমণ এবং ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী’ হিসাবে বিদেশি কর্মীদের শনাক্ত করে ‘বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক’ পরিবেশ তৈরি করছে দক্ষিণ কোরিয়া।
কাদের পরীক্ষা করা দরকার এবং অপ্রতুল প্রস্তুতির অপ্রত্যাশিত নির্দেশিকা সম্পর্কেও অভিযোগ করেছেন অনেক বিদেশি।
গত বছরের ডিসেম্বরের পরিসংখ্যানের হিসাবে শহরে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬২৩ নিবন্ধিত বিদেশি কর্মী রয়েছেন। তবে নগর কর্মকর্তারা অনুমান করেছেন যে, মোট সংখ্যা তিন লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি হতে পারে।
সিউলের কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার ফ্লিন বলেন, আমি জানতে চাই সরকারের বাস্তব পরিকল্পনাটি কী। কারণ এ মুহূর্তে তারা আসলে কর্মী হিসেবে গণনা করছে। এই তথ্য কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে বা অন্য কোনো বিবরণ সম্পর্কে আমাদের কাছে পরিষ্কার ধারণা নেই।
তিনি বলেন, ভাইরাস সংক্রমণ বা ছড়িয়ে পড়ার দায় শ্রমজীবী বিদেশিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এটিকে হীনচিন্তার পরিকল্পনা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দুর্বল জনগোষ্ঠী এর শিকার এবং লাঞ্ছিত হচ্ছে।
ফ্লিন আরও উল্লেখ করেন, আরও অনেক সুপরিচিত উচ্চঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র এবং ভেন্যু রয়েছে। যেমন— গানের ঘর ও গির্জা, যা বর্তমানে কোনো বিশেষ বিধিনিষেধের আওতাধীন নয় বা তাদের শ্রমিকরা কোনো ধরনের পরীক্ষার আদেশের অধীনে নেই। শুধু কর্মরত বিদেশিদের পরীক্ষা করার পেছনে কোনো যুক্তি আমি দেখি না।
সিউলে বসবাসকারী একজন ফ্রিল্যান্সার পল ম্যাথিউজ বলেন, আমি কেবল অভিবাসী হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। তবে হঠাৎ সিউলের প্রতিটি বিদেশির পরীক্ষা করার দাবি করা হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে।
তিনি জানান, কোরিয়াতে করোনা শুরুর দিকে যখন গির্জায় কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, যখন শুধু গির্জায় থাকা লোকদের পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন কোরিয়ার সব খ্রিস্টানের পরীক্ষা করা হয়নি।
‘আমি কেবল তাদের ইচ্ছায় এ সিদ্ধান্তটি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতাম— যাতে বিদেশি বাসিন্দারা বুঝতে পারেন। অন্যথায় এটি আমাদের পক্ষে বর্ণবাদী এবং অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে।’
ছুটির দিনগুলো ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়াতে কর্মব্যস্তদের করোনা পরীক্ষা দুষ্কর। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সরকারের দেওয়া সময়সীমা অনেক কম। এতে সাপ্তাহিক ছুটিতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে মোটেও কাম্য নয়।
করোনা পরীক্ষার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিক ইজাজুল হক বলেন, একদিকে বৈষম্য, অন্যদিকে প্রদেশের অস্থায়ী পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
তিনি জানান, ছুটির দিনে হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে করোনা পরীক্ষা করার জন্য।
১০ বছরেরও বেশি সময় কোরিয়াতে বসবাস করছেন এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, অনেকেই বেশ কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করতে পারেননি, যা করোনা সম্ভাব্য সংক্রমণের উচ্চঝুঁকি। আর এদিকে সরকার চারজনের বেশি সমাগম হতে নিষেধ করেছে।