প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যতটুকু নাগরিক সেবা পাওয়ার অধিকার তার অনেকাংশেই মিলছে না। রাজনৈতিক দ্বন্দ, ক্ষমতার পালাবাদল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়হীনতার কারণেই পৌরসভা কাঙ্খিত উন্নয়ন হচ্ছে না। পৌরসভার এসকল সমস্য ও উন্নয়ন নিয়ে এবারের আয়োজন ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে।
মেহেরপুর পৌরসভার কাশারি পাড়া, হোটেল বাজার পাড়ার একাংশ, মহিলা কলেজ পাড়ার একাংশ, মল্লিক পাড়া, ফৌজদারী পাড়া, ঈদগাহ পাড়া, মিয়া পাড়া, নতুন শেখ পাড়া, প্রন্তিক সিনেমা হল পাড়া, দিঘির পাড়া একাংশ, পুলিশ লাইন পাড়ার একাংশ নিয়ে গঠিত ৭নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়, কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল, বি এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন বিভাগ, পুলিশ লাইন, যুব উন্নয়ন, ৫টি কিন্ডার গার্টেন, ৬টি ক্লিনিক।
ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা বতর্মান ৫ হাজার ২শ জন। ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর নুরুল আশরাফ রাজিব।
০৭ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরির্দশন করে দেখা গেছে, সড়ক নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তবে এর মধ্যেও রয়েছে কিছু সমস্যা। তবে কাউন্সিলরের দাবী পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। ৭নং ওয়ার্ড মেহেরপুর পৌরসভার একটি বৃহত্তর ওয়ার্ড। বিগত দিনে এই ওয়ার্ডে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
সরেজমিনে গিয়ে , ৭ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় নির্মাণ হয়নি ড্রেন। নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। এলাকার লোকজন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে। তবে পৌরসভা থেকে ময়লা আবর্জনা এক দুইদিন পর পর এসে নিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা। মল্লিকপাড়া ও ফৌজদারী পাড়াতে কাউন্সিলরের প্রচেষ্টায় দেওয়া হয়েছে ময়লা আবর্জনা ফেলার দুটি ভ্যানগাড়ি। যারা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে দৈনন্দিন ময়লা আবর্জনা নিয়ে আসে। এবিষয়ে
নতুন শেখ পাড়ার সজীব বলেন, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমরা মেইন সড়কে ময়লা রেখে আসি পৌরসভা থেকে এসে প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিন নিয়ে যায়। এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো না। আজ পযর্ন্ত আমাদের এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন ব্যবস্থা নেই।
প্রান্তিক সিনেমা হল পাড়ার এক দোকানী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপের পাশে দোকাদারী করে আসছি। বিভিন্ন এলাকার ময়লা এখানে রাস্তার পাশে ফেলা হত। নোংরা দূর্গন্ধময় রাস্তায় চলাচল করতে হয়। দূর্গন্ধে লোকজন দোকানে বসতে পা
রে না। তবে এখন সেই ময়লা আবর্জনা আর নেই।
মিয়াপাড়ার নাসির উদ্দিন বলেন, পাড়ার অলিগলির রাস্তাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাড়ির ব্যবহৃত ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা হয়ে থাকে। নোংরা দূর্গন্ধময় পানি মাড়িয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। একদিন দুদিন পরপর পৌরসভার গাড়ি এসে ময়লা নিয়ে যায়। ড্রেনগুলো অনেক দেরিতে
পরিষ্কার করে। তবে যেকোন সমস্যা কাউন্সিলরকে অবগত করলে তিনি সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
ফৌজদারী পাড়ার ময়না খাতুন বলেন, এলাকার একাংশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হলেও আমাদের অংশে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা। দৈনন্দিন ব্যবহৃত ও সামান্য বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পাড়ায় কোনো ডাষ্টবিন না থাকাই স্থানীয়রা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনায় ফেলে। পাড়ার প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন রাস্তাটি সংস্কার না করার কারণে বর্তমানে রাস্তাটি মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। রাস্তার লাইটগুলো কোথাও জ্বলে কোথাও জ্বলে না।
তানভির বলেন, পাড়ার ড্রেনগুলোর অবস্থা ভালো না। অনেকদিন ধরে পরিষ্কার করে না। তাছাড়া ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। অনেক দিন বলার পর পরিষ্কার করে। তবে মূলত আমাদের পাড়ার প্রধান সড়কটির নাজেহাল অবস্থা। বৃষ্টির সময় হাটা যায় না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাস্তার পাশের বাড়িওয়ালাদের ভালো হলেও পাড়ার ভিতরের অবস্থা ভালো না।
স্কুল পাড়ার নাহিদ জানান, তাদের পাড়ার প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। চলাচলে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। নেই ড্রেন, নেই ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। আমাদের পাড়ার চলাচলের প্রধান সড়কটি ১০ থেকে ১৫ বছর সংস্কার করা হয়নি। রাস্তাটি মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য আজ পর্যন্ত কোন ড্রেন নির্মাণ হয়নি।
কিছু সমস্যা থাকলেও রাস্তা ও ড্রেনের উন্নয়ন লক্ষ্য করা গেছে। তবে অচিরেই যতটুকু সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের প্রক্রিয়াও চলমান বলে জানিয়েছেন ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আশরাফ রাজিব।
ওয়ার্ডের উন্নয়ন চিত্র:
ময়ামারি সড়ক নির্মাণ। দিঘিরপাড়া জাহিদের বাড়ি হতে মুসার বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ। শামসুলের বাড়ি হতে ফিরোজের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ। সবুরের বাড়ি হতে সিরাজুলের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ। একই এলাকার প্রধান সড়ক হতে মুরাদের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ। পুলিশ লাইন পাড়ার হোসেনের বাড়ি হতে মিলনের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। নতুন শেখ পাড়ার খোকনের বাড়ি হতে হাপুর বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। মল্লিক পাড়ার বকুলের বাড়ি হতে খোকনের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। শরিফের বাড়ি হতে সামাদের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। তৌহিদুলের বাড়ি হতে মিল্টনের বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং। মুকুলের বাড়ি হতে নাসিরের বাড়ি পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ। সেতুর বাড়ি হতে মোস্তফার বাড়ি পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ। মহাদ্দেসের বাড়ি হতে আলীর বাড়ি পর্যন্ত ফ্লাট সোলিং নির্মাণ।
শহীদ আরজ সড়ক হালিমের বাড়ি হতে কালাম বিহারীর দোকান পর্যন্ত ড্রেনসহ পাকা সড়ক নির্মাণ। মল্লিক পুকুর হতে সাত্তার দরজীর বাড়ি পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ। কাবাতুল্লার বাড়ি হতে কামাল প্রিন্টিং প্রেস পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ। এছাড়াও ৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন মসজিদে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন। বিভিন্ন রাস্তায় সোলার ষ্ট্রিট লাইট স্থাপন। দিঘিরপাড়া এলাকায় ২২টি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।
মেহেরপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আশরাফ রাজিব বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা বিগত দিন থেকেই নানান সমস্যায় জর্জরিত ছিলো যা আমি অধিকাংশ সমাধানের চেষ্টা করেছি এখনও যতটুকু সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের স্বার্থে ও ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য যেসব কাজ করার কথা ছিল বা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম তা আমি অনেকেই সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। এর মধ্যে এলাকার জনসাধারণের সব অভিযোগও সঠিক নয়। ময়লা আবর্জনা আমরা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার কথা বললেও মানুষ তা কর্ণপাত করে না। যার যেখানে ইচ্ছা ময়লা আবর্জনা ফেলে। অনেকেই ড্রেনেই আবর্জনা ফেলে। এই পৌরসভা আমাদের। আমরা যদি পৌরসভাকে নিজের না ভাবতে পারি তাহলে মেয়র বা কাউন্সিলরের একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। আমাদের মেয়র একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। তিনি পৌরসভাকে পরিচ্ছন্ন ভাবেই সাজাতে চান। কিছু সমস্যা থাকার কারণেই পৌরসভার অনেক উন্নয়ন ব্যহত হয়েছে। এরপরও কিছু কিছু সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের প্রক্রিয়াও চলমান। আমি আমার এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা দেয়ার চেষ্টা করেছি।