কানের ভেতর নানা কারণে শব্দ হতে পারে। অনেক সময় গোসলের সময় পানি গিয়েও ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে পারে। কী কারণে কানে কম শুনছেন এর চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময় কানের শ্রবণশক্তি ঠিক থাকলেও কানের ভেতর শব্দ হয়।
কানে কেন শব্দ হয় এবং এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন নাক কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহির আল-আমিন।
যারা কানে কম শুনেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের এ শব্দটা হয়। কেউ যদি কানে কম শুনে তবে দেখতে হবে কেন কম শুনেন। কারণ দূর করার পরও যদি রোগী ঠিকমতো না শোনেন তবে একটা মেশিন হেয়ারিং এইডের প্রয়োজন হতে পারে। তার আগে
* কানের ভোঁ-ভোঁ শব্দের দিকে বেশি নজর দেবেন না। মনে রাখবেন আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে সিগন্যাল মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্ক এ তথ্য পর্যালোচনা করে এবং যদি মনে করে এটি প্রয়োজনীয় কেবল তখনই এর দিকে নজর দেয়। আপনি যদি সব সময় কান খাড়া করে বাইরের বিভিন্ন শব্দ শোনার চেষ্টা করতে থাকেন তবে এটা থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। এর দিকে নজর দেবেন না দেখবেন শব্দ হয়তো থাকবে কিন্তু এটা আপনাকে বিশেষ কষ্ট দেবে না।
* আশপাশে কোনো গান বা সিডি বা অন্য কিছু ছেড়ে রাখুন, অন্য কোনো শব্দ থাকলে আপনি আপনার কানের শব্দ কম শুনতে পারবেন।
* কাজের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন, দেখবেন আপনার কানে শব্দ কম সমস্যা সৃষ্টি করবে।
* মনে রাখবেন, ডাক্তার আপনার সমস্যা বের করার জন্য উপযুক্ত পরীক্ষা করেছে। আপনার কোনো মারাত্মক সমস্যা নেই জেনে নিজেকে উৎফুল্ল রাখুন। কারণ এ শব্দ আপনাকে বেশি কষ্ট দিতে পারবে না।
* অনেক সময় চিকিৎসকরা এর জন্য কিছু ওষুধ দেন বা কানের টিনিটাস মাস্কার নামে এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
* মনে রাখবেন আপনার মনকে বোঝানোর দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আপনার। অতিমাত্রায় যন্ত্রনির্ভর বা ওষুধনির্ভর না হয়ে যদি পারেন তো নিজের মনের রাশ টেনে ধরুন। এতে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি আপনার কান, স্নায়ু বা মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা না থাকে তবে আপনিই হবেন আপনার রোগের ডাক্তার।
কানের সমস্যা থেকে মাথা ঘুরানো
আমাদের অন্তঃকর্ণের ভেসটিবুল ও সেমি সার্কুলার ক্যানাল, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার প্রধান অঙ্গ। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণের অনেক সমস্যা থেকে কানের ভেতরে ভারসাম্য রক্ষার পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে মাথা ঘুরাতে পারে।
কানের থেকে মাথা ঘুরানো
* কানের ভেতরে ময়লা জমে গেলে।
* বহিঃকর্ণের ইনফেকশন।
* মধ্য কর্ণের ইনফেকশন যা নাকের পেছন দিয়ে কানের ভেতরে যায়।
* কানের পর্দা না থাকা।
* ঘনঘন কান পাকা।
* কোলেস্টিয়াটমা ও কানের মধ্যে পানি জমে থাকা।
* ঘনঘন অথবা বেশি মাত্রায় সর্দি-কাশি হয়ে ইউস্টিশিয়ান টিউবের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে মাথা ঘুরানো হতে পারে।
* নাকের হাড় বাঁকা থাকা।
* সাইনাসের দীর্ঘদিনের ইনফেকশন সমস্যা থেকেও মাথা ঘুরানো হতে পারে।
এ ছাড়া অন্তঃকর্ণের কিছু সমস্যার জন্য মাথা ঘুরাতে পারে, তার মধ্যে প্রধান হলো অন্তঃকর্ণের ভেতরে ভাইরাল ইনফেকশন। এটা সাধারণত কমন কোল্ড অথবা প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। এ ছাড়া চিকেন পক্স, মিজেলস থেকেও কানের ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে।
কান ও আশপাশের কিছু জটিল রোগের জন্য মাথা ঘুরাতে পারে যেমন-
* অটোস্কোরোসিস : কানের ভেতর হাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
* মেনিয়ার্স ডিজিজ : অন্তঃকর্ণের প্রেসার বেড়ে গেলে।
* কানের ভেতর টিউমার বা ক্যানসার হলে।
* নাকের পেছনে ক্যানসার হলে।
মাথা ঘুরালে করণীয়
* মাথা ঘুরার সমস্যা বেশি থাকলে একা একা চলাফেরা ঠিক নয়। একিউট অবস্থাতে একা একা চলাফেরা পরিত্যাজ্য, এ অবস্থাতে বিশ্রাম জরুরি এবং অন্যান্য কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
* ঘনঘন বমি হলে শরীরের ভেতরে পুষ্টি, লবণ ও পানির ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একিউট অবস্থাতে স্টিমিটিল বা সিনারন জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। দিনে তিনটা করে খাবেন অথবা প্রয়োজনে স্টিমিটিল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। এরপরও সমস্যার উন্নতি না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।