ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাম্য সড়ক থেকে শুরু করে উপজেলার মধ্যকার সড়ক-মহাসড়ক এখন ইজিবাইকের দখলে।
শিশু ও অদক্ষ চালকরা কোনো নিয়মনীতি না মেনে উপজেলার সড়কে যেখানে সেখানে ইজিবাইক থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এছাড়াও চালকদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হওয়ার হামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা ও যানজট।
যানবাহনে লাগানো হয় চোখ ঝলসানো এলইডি লাইট। অসংখ্যা ইজিবাইকের কারণে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের মেইন বাসস্ট্যান্ড, মধুগঞ্জ বাজার, নলডাঙ্গা বাজার, কোলা বাজার, নিমতলা বাসস্ট্যান্ড, কোটচাঁদপুর রোড, দুলাল মুন্দিয়া বাজার, বারোবাজার, চাপরাইল বাজার, গাজীর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলায় চলাচলরত ইজিবাইক চালকরা কোনো নিয়ম শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে সড়কে ইচ্ছামতো ইজিবাইক ঘুরিয়ে ফেলতে যায়, আবার রাস্তার ভাঙ্গা চোরা অংশ পরিহার করে ভালো অংশ দিয়ে যেতে চায়, ফলে তারা ঘন ঘন রাস্তায় এপাশ ওপাশ করে পথ চলে।
এমন অবস্থায় মোটরসাইকেলসহ দ্রুত গতির পরিবহনের পেছন থেকে আগে উঠতে গেলে ইজিবাইকে ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইক চালকদের খামখেয়ালীতে কালীগঞ্জ বাজার এলাকায় সৃষ্টি যানযট এখন প্রতিদিনের চিত্র। সাধারণ পথচারিদের অভিযোগ, ইজিবাইক চালকরা উপজেলার মধ্য যেখানে সেখানে তাদের বাইক পার্কিং করার কারণে সৃষ্ট যানজটে ২-৩ মিনিটের রাস্তায় কখনও কখনও ১০-১৫ মিনিট সময় লেগে যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে ২০১৪ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলায় অল্প কিছু সংখ্যক ইজিবাইক দেখা গেলেও বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যারা ইজিবাইক চালাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ১২-১৩ বছর বয়সের কিশোরও রয়েছে। এখন প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক সড়কে নামানো হচ্ছে। এসব ইজিবাইক এলাকার যে কোনো সড়কে চালানোর কোনো অনুমতি না থাকলেও যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে বেপরোয়া দ্রুত গতিতে যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে যাত্রী বহন করছে।
এসব ইজিবাইক চালকদের মধ্যে কেউ মাঠে কৃষক, শ্রমিক অথবা আগে রিকশা, ভ্যান চালাতেন। আবার কেউ কেউ বয়সে কিশোর, এদের শতকরা ৮০ জন চালকই জানেন না কিভাবে রাস্তায় ইজিবাইক চালাতে হয়। তারপরও তারা নিয়মিত সড়ক মহাসড়ক ছাড়াও গ্রামঅঞ্চলের সড়কে ৮/৯ জন করে যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও বর্তমানে এসব যানবাহনে চালকরা লাগাচ্ছেন চোখ ঝলসানে এলইডি লাইট। রাত্রে যখন এসব যানবাহন এলইডি লাইট জ্বালিয়ে বেপরোয়া ভাবে দ্রুত গতিতে চলাচল করে তখন বিপরীত দিক থেকে আসা পথচারী, বাইসাইকেল, মটরসাইকেল চালকরা সামনে কিছুই দেখতে পারে না। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
ইজিবাইক চালক খায়রুল জানান, তিনি ৪-৫ বছর ধরে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। এটা চালিয়ে ৫ সদস্যর সংসারে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হারে প্রতিদিন নতুন নতুন ইজিবাইক রাস্তায় নামছে তাতে যানযট সৃষ্টি হচ্ছে। তার অভিযোগ নতুন ইজিবাইক চালকরা আইনকানুন মানে না। কে কত টাকার ভাড়া আয় করবে তারা সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মুহা: মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, ইতোপূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ ২ বার মাইকিং করেছেন যাতে অপ্রাপ্ত ও বয়স্করা মোটরসাইকেল-ইজিবাইক না চালায় এবং তাদের চালানোর অনুমতি দেয়া হবে না। ইজিবাইক চালাকদের নিয়ন্ত্রিতভাবে চালানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর আইন অনুসারে মহাসড়ক, বাজার এলাকা, মেইন বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন শপিং মলের সামনে যাতে অযথা ভীড় না করে তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া এবং এলইডি লাইট অপসারনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।