চারিদিকে বইছে শীতের আমেজ, সকাল বেলাতে পড়ছে হালকা কুয়াশা। ঘাসের ডগায় জমছে শিশির কণা। এই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সবাই যখন কাঁথার নিচে উষ্ণ বিছানায় ঘুমাচ্ছে, ঠিক সে সময় এক দল মানুষ বেরিয়ে পড়েছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রসিদ্ধ খেজুর রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে।
আহা খেজুরের রস, বিকাল বেলা গাছ কেটে তাতে পোড়ানো মাটির হাড়ি ঝুলিয়ে রাখা, সারারাত টপ টপ করে ফোটা ফোটা খেজুর রস জমা হয় হাড়িতে। ভোর হওয়ার সাথে সাথেই গাছিরা চলে যায় খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস ভর্তি মাটির হাড়ি নামিয়ে রস সংগ্রহ করতে।
স্থানীয় ভাষায় ছিকে-বাঁকে করে রসের হাড়ি বাড়ি আনতে আনতে ভালো মতই দিনের আলো ফুটে যায়। কাচা রস খাওয়ার জন্য উৎসাহ ভরে বসে আছে বাড়ির বৃদ্ধ বনিতা, ছেলে মেয়ে সকলে। কাচা রস খাওয়ার পর অবশিষ্ট রস দিয়ে শুরু হয় এ অঞ্চলের নামকরা খেজুর রস প্রস্তুতির কাজ। রস বিশাল হাড়ি বা তবালে জ্বালিয়ে তৈরি হয় সুমিষ্ট খেজুর গুড়।
কথা গুলো হচ্ছিলো উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রাম নিবাসী মোস্তফা গাজীর সাথে, জানান ছোটোবেলা থেকেই তিনি খেজুর গাছ কাটেন, একসময় ছিলো শখ এখন নেশার সাথে হালকা উপার্জনের মাধ্যম। জানান কাচা রস ভর্তি মাটির ভাড় প্রতি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন, রস জ্বালিয়ে গুড় বা পাটালি করে কেজি প্রতি বিক্রি করেন ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এখন রস জ্বালিয়ে বিক্রি করে লাভের পরিমাণ খুব সামান্য হয়ে গেছে।
বাংলা কার্তিক মাসে শীতের আমেজ পড়লেই গাছ তোলা বা কাটার প্রস্তুতি শুরু করেন। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। একটি গাছ থেকে এ কয়েক মাসে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত খেজুর গুড় তৈরি করা যায়। তৈরি গুড় বিক্রি করেন কালীগঞ্জের বৃহত্তম গুড়ের হাট বারোবাজারে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে কিনে নেন এসব গুড়। অনেক সময় স্থানীয়দের মাঝেও বিক্রি করেন।
কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বর্তমানে খেজুর গাছের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে, গাছিদের সংখ্যাও কমে আসছে দিন দিন, অনেক গাছি বলেন, সরকারি সামান্য সাহায্য সহযোগিতা পেলেও খেজুর গুড় তৈরিতে আগ্রহী হবেন অনেকে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি সম্ভব হবে বাইরের দেশেও।