বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রবল সাইক্লোন ‘বুলবুলের’ কারণে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে।
সকাল ছয়টা নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৩০ কিলোমিটার থাকবে, যেটি ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরায় দ্বীপ এবং চরসমূহ ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, ল²ীপুর, চাঁদপুরের দ্বীপ এবং চরসমূহের জন্য ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
সমুদ্র বন্দরগুলোতে এরই মধ্যে পণ্য উঠা-নামা বন্ধ রয়েছে।
সমুদ্রের ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে আরো পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করে দিয়েছে।
এরই মধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এনজিও কর্মী, রোভার ও স্কাউট সদস্যরা।
এদিকে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুপুর ১২টা থেকে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলেও গতকার শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করেছে।
একই সাথে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট পানির উচ্চতা। এখন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড, হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, মেহের আলীর চর, অফিসকিল্লা, মাঝেরচর, আলোরকোল, মরণেরচরে আছড়ে পড়েছে।
১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রেমেই বাড়ছে ঝড়ের তিব্রতা। তছনছ করে দিয়েছে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর আরও জানান, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলারচরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী এলাকার আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, মাঝেরকেল্লা, অফিসকিল্লা ও শেলারচরে ২২ বছর আগে নির্মিত হওয়া জরাজীর্ণ ৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ হাজারেরও বেশি জেলেরা আশ্রয় নিতে পেরেছে।
এসব আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান সংকুলন না হওয়ায় শুঁটকি পল্লীসহ ঝড়ের কারণে সাগর থেকে আসা আরো কয়েক হাজার জেলে নৌযানে করে ছোট-ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ায় নৌযানে করে সুন্দরবনের খালে আশ্রয় নেয়া জেলেদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
নিজেস্ব প্রতিনিধি