ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের আমেজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা ছুটছেন জনগণের কাছে। কেউ কেউ দলের উচ্চ পর্যায়েও দোড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিন এর এবারের আয়োজন ‘গ্রামীণ জনপদে ভোট’ শীর্ষক সাক্ষাতকার পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে মেহেরপুর প্রতিদিন এর মুখোমুখি হয়ে ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল আলম। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন নিজস্ব প্রতিনিধি পলাশ আহমেদ। সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশটি এখানে তুলে ধরা হলো।
মেহেরপুর প্রতিদিন: আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে থাকবেন কিনা?
শহিদুল আলম: বর্তমানে যে পরিবেশ তাতে নির্বাচন করার ইচ্ছা বা মানসিকতা নেই, তবে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। আমি কুতুবপুর ইউনিয়ন বি এন পির সভাপতি যার কারনে দলের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছি। তবে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে বলে যদি কোন প্রতিশ্রুতি পাই তখন ভেবে দেখবো।
মেহেরপুর প্রতিদিন: আপনি কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চান না?
শহিদুল আলম: বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, সর্ব সাধারণের ভোটাধিকার হনন করা হয়েছে। কাউকে আর ভোট দেওয়া লাগে না। আপনারা দেখেছেন বিগত নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে কাউকে প্রবেশ করতে দেয় নি। ইচ্ছে মত ভোট চুরি করে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচিত হয়েছে। কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, তাই এমন একটা বাজে পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভুগান্তি ছাড়া আর কিছুই না।
মেহেরপুর প্রতিদিন: চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে মনে করেন।
শহিদুল আলম: আপনারা জানেন, আমি বিএনপি’র দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছি। বর্তমান প্রক্ষাপটে উন্নয়ন করার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমান ক্ষমতা শালী দলের বিভিন্ন নেতা বর্গদের চাপে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বর্তমান কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী ইউনিয়ন পরিষদের সকল কাজের তদারকি করেন যার কারণে আমি আমার ইচ্ছে মত কোন কাজই করতে সক্ষম নই।
নির্বাচনী ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সে গুলো সব বাস্তবায়ন করতে পারি নি ক্ষমতাসীন শোষক ও শাসক গোষ্ঠীর কারণে। তবে উন্নয়ন করেছি আমার সামর্থ ও সক্ষমতা অনুযায়ী।
মেহেরপুর প্রতিদিন: আপনি কোন কাজ গুলো সফল ভাবে করেছেন?
শহিদুল আলম: মাদক নিয়ে আমার ইউনিয়নে ব্যপক কাজ করেছি আগের তুলনায় আর সেই রকম মাদক সেবী বা মাদক ব্যবসায়ী নেই। বাল্য বিবাহ একদমি নেই তবে যদিও হয়ে থাকে তাও আমার এবং প্রসাশনের অগচরে।
ইউনিয়ন ভিত্তিক সকল সেবা ডিজিটাল করা হয়েছে। জনগণকে এখন কোন কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না। করোনাকালীন সময়ে আমার ইউনিয়নের নিন্ম বিত্ত মধ্যবিত্ত সকল মানুষের জন্য সরকারি সুবিধা দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।
মেহেরপুর প্রতিদিন: আপনার উন্নয়নে জনগণ কতটুকু সন্তুষ্ট, যাতে করে জনগণ আপনাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে?
শহিদুল আলম: জনগণ আমাকে ভালোবেসে, আমার প্রতি আস্থা রেখে আমাকে তাদের মুল্যেবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেই কথা ভেবে জনগণকে আমার যতটুকু সম্ভব আমি দিয়েছি যা সন্তষ্টকর বলে মনে করি।
তবে আমার এই ৫ বছরে ক্ষমতা থাকা কালীন অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যার জন্য আমাকে আরো নিজেকে সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ করতে হয়। পিছনের আমার বিরোধী পক্ষ আমার ভুল ধরার জন্য বসেই আছে। এই জন্য আমি আমার মান সম্মানটা ধরে রাখার জন্য সবার সাথে সমন্বয় করে কাজ করি।
মেহেরপুর প্রতিদিন: পুনরায় নির্বাচিত হলে কি কি করতে চান?
শহিদুল আলম: আমার কুতুবপুর ইউনিয়নকে বেকার মুক্ত, স্বালম্বী ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বর্তমানে ব্যাপক ভাবে যুব সমাজের অবক্ষয় ঘটছে যাতে করে এ জাতিকে একসময় চরম ক্ষতির স্বীকার হতে হবে বলে মনে করি । কারণ বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে, তাদের কর্মসংস্থানেরর সৃষ্টি করতে হবে।
সরকারি চাকরি না হোক বিভিন্ন ফার্ম দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি প্রসিক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে ভালো হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
আমাদের ইউনিয়নে বিধবা মহিলাদের জন্য কর্ম সংস্থান সৃষ্টি করা। তারা যে ভাতা পান তাতে তো তাদের কিছুই হয় না এক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিলে তারা সেই কাজ করে জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন করতে পারতো বলে মনে করি।