কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় খুনের বদলে খুন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনার পর দিন গত মঙ্গলবার সদকী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়।
দুপুরে চরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। তবে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে সুনসান পরিবেশ। পথঘাটে তেমন কোনো লোকজনও দেখা যায়নি।
জানা গেছে, উপজেলার চরপাড়া গ্রামে দুই বছর আগে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন হুমায়ুন মণ্ডল। প্রতিশোধ নিতে গত সোমবার ওই মামলার চার নম্বর আসামি মো. সেলিমকে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওই দিন সন্ধ্যায় নিহত সেলিমের স্বজনদের ফাঁসাতে নিজেদের ফাঁকা রান্না ও গোয়ালঘরে আগুন ধরিয়ে দেন অভিযুক্ত হুমায়ুন মণ্ডলের ছেলেরা, এমনই অভিযোগ সেলিমের স্বজনদের। নিহত সেলিম একই গ্রামের সেকেন আলীর ছেলে। তিনি একটি ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন।
এদিকে ঘটনার দিন সোমবার রাতে নিহত সেলিমের ভাই শাহিন আলী বাদী হয়ে ২৯ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন একই এলাকার আব্দুর রহমান, রাজু ও রাজিয়া খাতুন।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে অর্ধেক গ্রাম মানুষশূন্য রয়েছে। ফাঁকা বাড়ি পড়ে আছে। অনেকে বাড়ির আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশুও সঙ্গে নিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পুলিশ ও নিহত সেলিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ মে জমি সংক্রান্ত জের ধরে চরপাড়ায় হুমায়ুন মণ্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পর দিন নিহত হুমায়ুন মণ্ডলের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সর্বশেষ নিহত সেলিমকে চার নম্বর আসামি করা হয়েছিল। তিনি জামিনে ছিলেন।
জানা গেছে, সোমবার সকালে সেলিম মৃত হুমায়ুনের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় হুমায়ুন হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাঁর ছেলে রাজু, ভাই সাইদুল ও তাঁদের পক্ষের লোকজন সেলিমকে তুলে নিয়ে যান। পরে সাইদুলের বাড়িতে নিয়ে সেলিমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সেলিমের মৃত্যু হয়।
মামলার বাদী ও নিহত সেলিমের ভাই শাহিন আলী বলেন, সকালে আমার ভাইকে খুন করেছে ওরা (প্রতিপক্ষ)। আবার আমাদের ফাঁসাতে মালামাল সরিয়ে নিজেদের রান্না ও গোয়ালঘরে তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেন। আমরা থানায় মামলা করেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আসামি পক্ষের একজনের স্ত্রী হাজেরা খাতুন বলেন, ‘ঘটনার পর আমাদের বাড়ির লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সুযোগে বাদীপক্ষ সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
গ্রেপ্তারের আগে প্রতিপক্ষের নিহত হুমায়ুনের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন বলেন, সেলিমদের বেশ কয়েকজন লোক সকালে আমাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘নিহত সেলিমের ছোট ভাই মামলা করেছেন। তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।