কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে নিখোঁজ আরেক এএসআই মুকুল হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন কুমারখালীর ওসি ফোন করে জানান, লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এএসআই মুকুল হোসেনের লাশ ভেসে উঠেছে।
এর আগে গত সোমবার ভোরে উপজেলার বেড় কালোয়া এলাকার দুর্বৃত্তদের হামলায় নৌকা থেকে পদ্মা নদীতে নৌকা থেকে পড়ে কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল আলম ও এএসআই মুকুল হোসেন নিখোঁজ হন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এএসআই সদরুল আলমের লাশ ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার ভোর চারটার দিকে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ সদস্য, স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য ও দুই মাঝি মিলে পদ্মার ওপারে চরসাদীপুর এলাকায় আসামি ধরতে যাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকটি নৌকার জেলেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। তখন প্রাণ বাঁচাতে দুই পুলিশ সদস্য নদীতে ঝাঁপ দেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভোরে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নৌকা নিয়ে পদ্মা নদীতে যান। এ সময় তাঁরা জেলেদের মাছ লুট করার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বেশ কয়েকটি নৌকার লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান।
বেড় কালোয়া এলাকার জেলে এজাহার শেখ বলেন, ‘রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সে সময় দুই ইউপি সদস্য ও ছয়জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যান। মাছ নেওয়ার পরে পুলিশ আবার মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে চলে যায়।’
বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে তাঁকে ফোন দিয়ে জানান, নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ইউপি সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। ওই খবর শুনে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে এএসআই সদরুল আমাকে ফোনে বলেন, “ভাই, আমরা বিপদে আছি। সাহায্য করেন।” তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে এসআই নজরুলসহ চার পুলিশ সদস্য ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এসআই নজরুলের মাথায় আঘাত ছিল।’
ইয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পুলিশ সাদাপোশাকে ছিল। ইউপি সদস্যরা জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিলেন। ৩০ থেকে ৪০ জন জেলে ডাকাত ভেবে হামলা চালিয়েছিলেন।’
পুলিশের আসামি ধরতে যাওয়া ও জেলেদের হামলার বিষয় নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চরসাদীপুরে পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মার ওপারে পাবনা শহরের কাছাকাছি এলাকায় পুলিশ খুব কমই যায়। দিনের বেলা ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেখানে যেতে অনীহা দেখায়, সেখানে গভীর রাতে যাচ্ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, চরসাদীপুর বা খেয়াঘাট শিলাইদহ ইউনিয়নের কোনো ইউপি সদস্যকে সঙ্গে না নিয়ে দূরের ইউপি সদস্যদের নিয়ে কেন পুলিশ আসামি ধরতে যাওয়ার কথা বলছে। এমনকি আসামি ধরতে গেলে সিভিল পোশাকে ও অস্ত্র ছাড়াই কেন যাবে?
আবার মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, সোমবার রাতে পদ্মা নদীতে তাদের কোনো অভিযান ছিল না।