কুষ্টিয়ার ইবি থানা এলাকার হরিনারায়ণপুর বাজারের অজন্তা লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী শ্রী অরুপ কুমার সাহা করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছেন।
সোমবার রাত ৩ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন। তিনি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার নেতা ছিলেন। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরলোগমন করায় তার সৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া প্রতিবেশী কিংবা তার ধর্মের কেউই এগিয়ে না আসলেও খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনের কুষ্টিয়া জেলার কয়েকজন তার সৎকার কাজ সম্পন্ন করে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিভিল সার্জন কুষ্টিয়া থেকে মোমতাজুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনের কুষ্টিয়া জেলার প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নিজেরা সৎকারের কাজ সম্পন্ন করেন। মোমতাজুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এবং খেদমতে খলক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়া জেলা শাখা পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম, আবুল হাসেম, মাওঃ মাছুম বিল্লাহ ও মাওঃ আবুল হাসান এতে অংশ নেয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে লাশের সৎকার পর্যন্ত তারাই সম্পন্ন করে। কোভিড ১৯–এ (করোনা) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশের সৎকার প্রক্রিয়া শেষ করে মুঠোফোনে কথাগুলো বললেন মোমতাজুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান। তিনি কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত বেসরকারি সংস্থা খেদমতে খলক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়া জেলা শাখা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে হরিনারায়ণপুর শশ্মানে নিয়ে দাহ পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও কাছে আসেনি ভয়ে। তবে আমরা ভয় পাই না। এই মৃত ব্যক্তিরা তো আমাদেরই কারও না কারও স্বজন।’ তিনি আরও বলেন, সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লোভস, চোখে চশমাসহ পুরো পোশাক পরে গরমের মধ্যে কাজ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য, তা বলে বোঝানো যাবে না। দমবন্ধ হয়ে আসে একেক সময়।
মৃত ব্যক্তির হাসপাতালের কাগজপত্র তৈরি না থাকলে পিপিইসহ অন্যান্য পোশাক পরে বসে থাকার সময় আরও বাড়তে থাকে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামিয়ে দিয়ে দলের সবার পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক আগুনে পুড়িয়ে দিয়েই পরে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়।
অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মোঃ আরিফুজ্জামান বললেন, এক মৃত ব্যক্তির ছেলে হাসপাতালে এলেও জানাজায় অংশ নিতে চাননি। আরেক মৃত ব্যক্তির ছোট ভাই জানিয়ে দেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই হাসপাতালে আসবেন না। কয়েকটি ঘটনায় কোনো স্বজনকেই পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত জেলায় ৪৭ জনের মৃতদেহ দাফন সম্পন্ন করেছেন এই সংগঠনটি।