ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগে কুষ্টিয়ার এক পৌর মেয়রসহ ৭ কাউন্সিলর, এক ইউপি চেয়ারম্যান এবং অপর এক মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা খাতুন স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন। ফৌজদারি এ অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২৩ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামসুজ্জামান অরুন, একই পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর এবং মরিচা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা। ক্রিমিনাল মিস কেস নং-০২/২০২০, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-১৯০(১) (সি) এখতিয়ার বলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এ আদেশ দেন।
গত ৩ এপ্রিল স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় কুমারখালী পৌরসভার মেয়রসহ ৭ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে করা একটি প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় কুমারখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত ১৩৫০ প্যাকেট ত্রাণ সংশ্লিষ্ট মেয়রের কাছ হতে কাউন্সিলররা অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য গ্রহণ করেন। কিন্তু সেই ত্রাণ বিতরণের পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানে উঠে আসে উল্লেখিত ওয়ার্ডগুলোতে তালিকায় নাম থাকা গরিব, অসহায় ও অসহায় হতদরিদ্র ব্যক্তিরা ত্রাণ সামগ্রী পাননি এবং মাস্টার রোলে টিপসই বা স্বাক্ষর দেননি। কিন্তু তাদের নামের পাশে স্বাক্ষর এবং টিপসই দেখানো হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ধরা পড়া এসব ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ২, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ৯।
এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, আদেশের বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। তবে লিখিত কোনো অর্ডার এখনও পাইনি। আদেশ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদেশের বিষয়ে কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামসুজ্জামান অরুন জানান, ১৩৫০ জনকে ত্রাণ দেওয়ার সময় দেখা যায় ৩০০ কেজি চাল সেখানে কম রয়েছে। আমি নিজে পকেটের টাকা দিয়ে ওই ৩০০ কেজি চাল কিনে বিতরণ করেছি। তাই ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রশ্নই ওঠে না। এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
অপর ক্রিমিনাল মিস কেস নং-০৩/২০২০, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-১৯০(১) (সি) এখতিয়ার বলে প্রদত্ত আদেশে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘কুষ্টিয়ার ইউপি সদস্যের হোল ফ্যামিলির নামে ভিজিডি কার্ড এবং চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে দুস্থদের চাল নিচ্ছে মেম্বার ইউএনও জানেন না কিছুই’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, দৌলতপুর থানাধীন ৪নং মরিচা ইউনিয়নের সদস্যরা তার নিজের এবং পরিবারের অন্যদের নাম দিয়ে ভিজিডি এবং ওএমএস’র কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১৫ মাস ধরে চাল আত্মসাত করে আসছেন।
সেই প্রতিবেদনে জানা যায়, ৪নং মরিচা ইউনিয়নের ১, ২, ৩নং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা নিজ নামে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে ইস্যুকৃত ভিজিডি কার্ডের অনুকূলে চাল তুলেছেন বলে প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করেছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক ভিজিডি ও ওএমএস’র কার্ড করে সরকারি চাল তুলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন মর্মে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
এ ঘটনাটিও তদন্ত করে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।