কুষ্টিয়ায় প্রি- পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি। তবে অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুতের বিনিময়ে উল্লেখিত সেবা কর আগে থেকেই ধার্য ছিল। এতদিন এই বিধি পালনে কর্তৃপক্ষ নজর না দিলেও এখন এই বিদ্যুৎ বিধি পালনে কড়াকড়ি আরোপের ফলে বিষয়টি গ্রাহকদের কাছে নতুন মনে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া শহরের কোটপাড়া এলাকার আবাসিক গ্রাহক নাজমুল হক বলেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর আমার প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করতে গেলে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকানো যাচ্ছিল না। এই সমস্যার সমাধানে আমি ছুটে যাই বিদ্যুৎ অফিসে। সেখানে বিদ্যুৎ কর্মীরা আমার সমস্যার কথা শুনে নতুন করে আরও ২০ ডিজিট মিটারে প্রবেশ করিয়ে আমাকে মিটারে টাকা রিচার্জ করতে বলেন। ওদের কথামতো নতুন করে ইস্যুকৃত ওই ২০ ডিজিটের নম্বর ঢোকানোর পর থেকেই হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরে আবারও যখন বিদ্যুৎ অফিসকে সমস্যার কথা জানাই তখন তারা বলেছে, আমি নাকি লোড ক্যাপাসিটির চেয়ে অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি; তাই এই সমস্যা হচ্ছে। সমাধান করতে হলে আরও ৪০৩ টাকা জমা দিয়ে ব্যবহার সক্ষমতা বা লোড ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এই ব্যবহার বৃদ্ধির শর্ত হলো প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য প্রতি মাসে বাড়তি আরও ৩৫ টাকা হিসেবে সেবা কর দিতে হবে। আমি এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে আমার কি করা উচিত? বিদ্যুৎ বিভাগ দেখছি দিনকে দিন নানা খাত দেখিয়ে প্রি-পেইড গ্রাহকের পকেট থেকে টাকা খসিয়ে নিচ্ছে।
শহরের মজমপুর এলাকার গ্রাহক কলেজ শিক্ষক রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গ্যাড়াকলে ফেলে বিদ্যুৎ বিভাগ ঠিকই ডিমান্ড চার্জ আদায় করছে, অথচ আমার নিকট প্রতিবেশীর বাড়িতে এখনও এনালগ মিটার চালু আছে। তাদের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতা নেই ডিমান্ড চার্জ আদায়ের বিষয়ে। এটা বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক সৃষ্ট গ্রাহকদের প্রতি একটা চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। এক দেশে এমন বৈষম্যমূলক দ্বৈত নিয়ম আমি কেন মানবো?’
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে দুই কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়া আছে এবং প্রতি মাসে আমি এই সেবা কর পরিশোধ করছি, অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের প্রি-পেইড মিটারের প্রযুক্তি কারসাজিতে আমার বাসার পানির মটর ছাড়লেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।’
জেলা ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়াতে ওজোপাডিকোর মোট গ্রাহক প্রায় ৬৯ হাজার। এসব গ্রাহকদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২৫ হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের ঘরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় এসব প্রি-পেইড মিটারে সংযোজিত সবগুলো অ্যাপস সক্রিয় না থাকায় ওই সময় গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জের বিষয়টি ওঠেনি। সম্প্রতি এসব প্রি-পেইড মিটারের সবগুলো অ্যাপস কেন্দ্রীয়ভাবে আপগ্রেডেশন করার ফলে সেগুলো সক্রিয় হয়েছে এবং এর ব্যবহার বিধিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে উঠে এসেছে।
ওজোপাডিকো কুষ্টিয়া ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘এতদিন গ্রাহক তার নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোন বিধি নিষেধ না মানলেও এই প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহককে অবশ্যই নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। তবে সম্প্রতি প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকরা কিছু সমস্যা নিয়ে আসছে। সেগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি।