কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করেছে। এতে হাতসহ ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ বিএনপি জেলা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
এদিকে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙচুর করা বঙ্গবন্ধুর ওই ভাস্কর্যে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শুক্রবার মধ্য রাতে দুর্বৃত্তরা নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে বলে শনিবার দুপুরে নির্মাণকারী শ্রমিকরা জানায়। এ ঘটনা জানার পর পুলিশ জেলার সবগুলো ভাস্কর্যে নজরদারি শুরু করেছে। এরপর সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ একদল মানুষ শহরের এনএস রোডে জেলা বিএনপির অফিসে হামলা করে সেখানে ভাঙচুর করে। এরপর রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই ভাস্কর্য লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি নোহা মাইক্রোবাস থেকে সেখানে গুলি ছুড়ে সেটি ঝিনাইদহের দিকে চলে যায়। সর্বশেষ রাত ৯টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ লোকজন শহরের মজমপুর গেটে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের ভাইয়ের মালিকানাধীন এসবি পরিবহনের অফিস ও কাউন্টার ভাঙচুর করে। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দুজন সংবাদকর্মীও হামলার স্বীকার হন।
পৌরসভা সূত্র জানায়, গত নভেম্বর মাসের শুরুতে কুষ্টিয়া পৌরসভা কতৃপক্ষ ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ের শাপলার ভাস্কর্য ভেঙে সেখানে তিনটি প্রধান সড়ককে সামনে রেখে নিচের দিকে জাতীয় চার নেতার মুর্যালে উপরে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে শহরের মজমপুরের অংশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। গতকাল শুক্রবার রাতে কে বা কারা সেটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে রাত দুইটার দিকে দুজনকে ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, আওয়ামী লীগের বিরোধী বঙ্গবন্ধুকে যারা মানতে পারে না তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও করা হচ্ছে।
এদিকে খুলনা বিভাগীয় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত দিয়ে দুর্বৃত্তরা আমাদের প্রাণে আঘাত করেছে। এদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের আঘাত ও একই স্থানে গুলি বর্ষণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
ফাঁকা গুলি ছোড়ার বিষয়ের প্রশ্নে অতিরিক্ত ডিআইজি এ.কে.এম নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে তারাই এই গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।