কুষ্টিয়ায় এবার অন্যান্য বারের তুলনায় সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সরিষা ক্ষেতে হলৃুদ ফুলেফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। জেলায় এবার মাঠের পরমাঠে সরিষার আবাদ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের সরিষা চাষি ফরজ আলী বলেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ বছর তিন বিঘায় সরিষা চাষ করেছেন। সরিষার ফুল দেখেই মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দিশা সংস্থা এবার আমাকে বিনামুল্যে বীজ,সার ও কীটনাশক বিনামুল্যে বিতরণ করেছে। ফলন ভালো হবে বলেও আশা করি। আশা করছি ন্যায্য মূল্য পেলে আমরা এবারও লাভবান হবো।
মশান গ্রামের আরেক চাষি নুর মোহাম্মদ বলেন, এবার দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত জমিতে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। বরং সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান বীজের দেখা যাচ্ছে। এতে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হতে পারবো।
তিনি বলেন, সরিষা চাষে তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। যদি এ বছর সরিষার ভালো মূল্য পাওয়া যায়, তবে সব সরিষা চাষিই লাভবান হবেন।
কৃষক আনোয়ার আলী বলেন,নিজের প্রয়োজন মেটাতে গেলো বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলাম। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে বেশ ভালো আবাদ হওয়ায় এবং তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ৭ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।
স্থানীয় দিশা স্বেচ্ছাসেবী আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, নস্থানীয় জাতের সরিষায় হেক্টর প্রতি ফলন হয় দশমিক ৫ থেকে দশমিক ৬ টন, সে তুলনায় বিনা ও বারিসহ উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষায় ফলন হয় হেক্টর প্রতি দেড় থেকে দুই টন। উচ্চ ফলনশীন জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করায় এ বছরও এর চাষ বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষ থেকে শুরু করে ফসল তুলতে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করা যায় দুই হাজার ৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘাতে ৫-৭ মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া মাত্র তিনমাস সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমণ না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষ নিরোধে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগীতায় এবং স্থানীয় দিশা স্বেচ্ছাসেবী আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থার বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিকল্প ফসল উৎপাদন ও বহুমুখী আয়ের উৎস্য সৃষ্টি শীর্ষক কার্যক্রম চালু করেছে।
দিশার কারিগরী কর্মকর্তা কৃষিবীদ জিল্লুর রহমান বলেন, এই মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের এগারোটি গ্রামে তামাক চাষ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য আমরা ১২০ জন কৃষকের মাঝে বিনামুল্যে সরিষা বীজ, সার ও কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় তামাক চাষ অনেকটাই কমে গেছে বলেও দাবী করেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পিকেএসএফ’র সহযোগীতায় ও দিশার বাস্তবায়নে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের সাথে যোগাযোগ রেখে এই কৃষিখাতকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরিষা চাষে ১১০০ হেক্টর জমিতে এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকরা গত বছর ভালো মূল্য পাওয়ায় ও আমাদের কৃষি অফিস থেকে ১৭শ ৬০ জন কৃষককে বিনামূল্যে ভালো জাতের বীজ দেওয়ায় এবার সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে।
কুষ্টিয়া শহর থেকে আসা কিরণ মাহমুদ তার পারিবার-পরিজন নিয়ে মশানের সরিষা মাঠে ঘুরতে এসেছে। তিনি জানান বাড়ীর পাশে যে হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। তা দেখে সত্যি মনটা বেশ প্রফুল্ল হয়ে যায়। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এই বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ দেখে সত্যি আমরা অভিভুত। এখানে এসে প্রকৃতি উপভোগ করছি ছবি তুলছে অনেক মজা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবীদ হায়াত মাহমুদ জানান, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৯২২ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর। তবে এবারে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে গত বছরের চেয়ে এবার সরিষা চাষ কিছুটা বেশি হয়েছে বলেও জানান তিনি।