কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে হাতুড়ি পিটিয়ে ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনবিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স চত্বরে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালটি ভেঙে চুর্ন-বিচুর্ন করার পর তা অপসারণ করা হয়। এতে খোদ দলীয় নেতা-কর্মীসহ শহরবাসীর মধ্যে দারুণ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত থানপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের পুরাতন অফিস ভবন অপসারণ করে ঐ স্থানে ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম ১৪তলা ভবনবিশিষ্ট আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ ছাড়া নির্মাণাধীন শপিং কমপ্লেক্সের পূর্বদিকের উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণ করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ বর্তমান চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বহুতল ঐ ভবনের পূর্বপাশসহ নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের পেছন দিকে নকশাবহির্ভূত ৬/৭টি একতলা দোকান-ঘর নির্মাণ করে তা বরাদ্ধ দেন। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য সাধনে নকশাবহির্ভূত ঐ দোকানগুলোর সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থাকায় যাতায়াতের পথটি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে নিয়োজিত শ্রমিকরা গত তিন দিন যাবৎ বড় হাতুড়ি পিটিয়ে ম্যুরালটি পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। অবশ্য ঐ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মরক্ষার জন্য নির্মাণাধীন বহুতল শপিং কমপ্লেক্স ভবনের সামনের দেওয়ালে বঙ্গবুন্ধুর একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করেন। এতে শহরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সোহেল রানা জানান, জাতির পিতা বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাদের দেশ স্বাধীন করেছেন। তার ম্যুরাল ভাঙার ঘটনাটি বড় অন্যায় ও খুবই দুঃখজনক।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, সামান্য অর্থের লোভে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে বর্তমান চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিন্দন ম্যুরাল ভেঙে চরম অপরাধ করেছেন। ধৃষ্টতাপূর্ণ এই অপরাধের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপসহ বিচার প্রার্থনা করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অবগত নই। তবে সৌন্দর্যবর্ধনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা জানান, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অপসারণ কিংবা স্থাপনের ক্ষেত্রে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাধ্যতামূলক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরালটি প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।