করোনাভাইরাসের হটস্পট কুষ্টিয়ায় এক প্রভাবশালীর নিয়ন্ত্রণে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল ব্যবসা। ২০ দিনের ব্যবধানে সব সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। মাত্র ৪০০ টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে ১ হাজার ১২শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে ও সংকট কাজে লাগিয়ে জেলার একমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল প্রতিষ্ঠান ‘মনির অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ অরাজকতা সৃষ্টি করছে। জীবন বাঁচাতে মানুষ চড়া দামে অক্সিজেন রিফিল করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া অক্সিজেনের প্রেসার (চাপ) নিয়েও গড়মিলের অভিযোগ রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের করোনার হটস্পট কুষ্টিয়ায় প্রতি ঘণ্টায় একজন করে মারা যাচ্ছে। আর এ সময়ে প্রায় ১২ জন করে শনাক্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে অরাজকতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সবাইকে ম্যানেজ করে মনির অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক মনিরুল ইসলাম মনির অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন মানুষ। কিন্তু সবাই নিশ্চুপ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মনির বলেন, বাজার উঠানামা করছে। যখন যেভাবে দাম হচ্ছে আমরাও সেভাবে বিক্রি করছি। বর্তমানে লিকুইড অক্সিজেনের দাম বেড়েছে। তাই রিফিলের দামও বেড়েছে।
তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি জেলার খুচরা অক্সিজেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে কোনো দাম বাড়েনি। স্বাভাবিক দামেই তারা বিক্রি করছেন। সিলিন্ডার সংকটে তারা চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন দিতে পারছেন না। এ সুযোগ নিচ্ছে মনির অক্সিজেন প্ল্যান্ট।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের পাশে প্রায় বছরখানেক আগে বেসরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল প্রতিষ্ঠান ‘মনির অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হয়। ভারত থেকে লিকুইড আমদানি করে রিফিল করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও তারা লিন্ডে ও স্পেকট্রার কাছ থেকে লিকুইড সংগ্রহ করে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করা হচ্ছে। ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে (করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল) প্রতিদিন ৬০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করে সরবরাহ করছে প্ল্যান্টটি।
সূত্র জানায়, ২০ দিন আগে একটি সিলিন্ডার (১.৩৬ কিউবিক মিটার) রিফিল করতে ১০০ টাকা নিত মনির অক্সিজেন প্ল্যান্ট। কিন্তু এখন নিচ্ছে ৩০০ টাকা। পাশাপাশি সিলিন্ডারের চাপ দুই হাজার থাকার কথা থাকলেও ১৫০০ থেকে ১৬০০ দিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডার (৬.৮ কিউবিক মিটার) রিফিল করতে মনির অক্সিজেন নিচ্ছে এক হাজার টাকা। সবচেয়ে বড় সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডার (৯.৮ কিউবিক মিটার) রিফিল করতে মনির হাতিয়ে নিচ্ছে এক হাজার ১২০০ টাকা। অথচ ২০ দিন আগেও ৬.৮ মিটার অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে ৪০০ টাকা এবং ৯.৮ মিটার অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে ৪৫০ টাকা নিয়েছে। অভিযোগ-নিয়ম অনুযায়ী সিলিন্ডারের প্রেসার (চাপ) সঠিক থাকে না। সর্বোচ্চ প্রেসার (চাপ) ১৪শ থেকে ১৫শ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ প্রেসারের অক্সিজেনে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব না বলে জানান চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আগে মনিরের প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন রিফিল করে বিক্রি করতাম। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ঢাকা থেকে রিফিল করে এনে বিক্রি করছি।
অক্সিজেনের প্রেসার (চাপ) গড়মিলের অভিযোগ বিষয়ে মনির বলেন, কুষ্টিয়ায় যেসব সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন রিফিল করা হয়, সেসব সিলিন্ডারের অবস্থা ভালো না। বেশি প্রেসার দিলে সিলিন্ডারে শব্দ হচ্ছে এবং যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য সিলিন্ডারে দুই হাজার চাপ দেওয়া সম্ভব নয়।