সারাদেশের মতো মেহেরপুর জেলাও পেঁয়াজ সংকটে জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। কোনভাবেই পেয়াঁজের সংকট মেটানো সম্ভব হচ্ছেনা।
সরকারও এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা বৈঠক করেও এ পর্যন্ত কোন সুরাহা করতে পারেনি পেয়াঁজ সংকটের। কয়েকদিন আগেও বানিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন পেঁয়াজের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে মন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের পরও থেমে নেই পেঁয়াজের মূল্যের উর্দ্ধগতি। এরই মধ্যে পেঁয়াজের কেজি প্রতি মূল্য ২শ’টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এরপরও দাম কমবে কিনা তারও কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা।
তবে সরকার পেঁয়াজের দাম মোটামুটি নাগালের ভিতরে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহন করেছেন। তারপরও পেঁয়াজের দাম কতটুতু সহনীয় পর্যায়ে আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছেনা। যেখানে গত বছর এই সময় পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকার মতো ছিল কোন কোন জায়গায় দামের তারতম্য ছিল।
মেহেরপুর জেলার কৃষকরা বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস, টেংরামাড়ি, শ্যমাপুর একই জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামেও অনেকে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। সে সময় পেঁয়াজের ফলন বেশ ভাল হয়েছিল বলা যায় বাম্পার ফলন হয়েছিল।
গতবছর মেহেরপুরের কৃষকরা প্রথম দিকে পেঁয়াজ ফলন করে লাভের মুখ দেখলেও পরে তা তাদের লোকসানের দিকে নিয়ে যায়। গত বছর পেঁয়াজ সংকটের শুরুতে সরকার ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার ফলে দেশের পেঁয়াজ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে যায়। লোকসান শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে পৌছায় যে চাষিরা পেঁয়াজ মাঠ থেকে তুলবে সে খরচও যোগাতে হিমশিম খেতে থাকে।
গত বছর মেহেরপুরের চাষীদের অধিকাংশরাই সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছিল। প্রথমে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও পরে এই পেঁয়াজ তাদের কাঁদিয়ে ছেড়েছে। অবশেষে তারা প্রতি মণ পেঁয়াজ তারা ১শ’ টাকা করে বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছে। সে সময় কৃষকদের সংকট নিয়ে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তাদের সংকট দুর করার জন্য জেলা কৃষি অফিস থেকে নানান পরামর্শ দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাতেও কৃষকের মুখে হাসি ফোঁটেনি। অবশেষে কৃষকরা ক্ষোভে দুঃখে ক্ষেতের পেঁয়াজ তুলে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। সে সময় কৃষকদের কান্নার চিত্রও ফুটে ওঠে।
পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার কারণে অনেকেই পেঁয়াজ চাষের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কৃষকদের সেই চাপা কান্না আর ক্ষোভ এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। আজ কৃষকদের সেই অভিশাপে সারাদেশের মানুষকে কাঁদাচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের দাম আগে কখনও এতা বেশি হয়নি বলে জানান অনেকে।
সরেজমিনে মেহেরপুরের টেংরামারি মোড়ের কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমাদের এখানে কেবল পেঁয়াজ লাগানো শুরু করেছে। গতবছর পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় মাস খানেক দেরি করেই অনেকে লাগাচ্ছে। টেংরামারি গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম মালিথার ছেলে কৃষক আব্দুল রাজ্জাক বলেন এখন চাষিরা পেঁয়াজ লাগানো শুরু করছে কেউ কেউ লাগান শেষ করেছে আবার কেউ কেউ ধান কাটা শেষ করে লাগাবে।
পেঁয়াজ লাগানোর তিম মাস পর বাজারে আসা শুরু করবে বলে কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন। সাথে সাথে তারা দাম না পাওয়া নিয়েও আশংকা করেছেন। কৃষকরা বলেন গত বছর পেঁয়াজ বিক্রয় করতে না পেরে অনেকে ক্ষেত পরিষ্কার করার খরচ না দিতে পেরে সেখানেই পঁচে নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা বলেন যদি কেজি প্রতি ১০টাকা দামও পাওয়া তবুও কৃষক বাঁচবে। কিন্তু গত বছর ৩টাকা কেজিও পাওয়া যায়নি। কয়েকজন কৃষক
সাংবাদিকদের বলেন সে সময় শুধু কৃষকরাই কেঁদেছে সেই কাঁদা এখন দেশের মানুষ কাঁদছে।
তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে পেঁয়াজের সংকট কেটে যাবে বলে কৃষকরা জানান। তারা বলেন এখন অগ্রহায়ণ মাস এখন পেঁয়াজ লাগানো পড়বে ফাল্গুন চৈত্র মাসের দিকে পেঁয়াজ বাজারে আসবে। কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন গতবছরের পেঁয়াজ ঘরের আড়াতে টাঙ্গিয়ে রেখেছি তাই এর সংকট এখনও বুঝতে পারিনি। সপ্তাহ খানেক পরে আমাদেরই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। এ নিয়েও তার মতো অনেক কৃষকও চিন্তিত বলে জানান।
-এ সিদ্দিকী শাহীন