ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে যে ছাত্র সংগঠনটির জন্ম, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গতকাল সোমবার ৭৩ বছর পূর্ণ করছে সেই ছাত্র সংগঠনটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্রলীগ। পাকিস্থান আমলেই মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
১৯৮৩ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে বর্তমান কমিটি পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন ১২ জন। আহবায়ক ছিলেন ২ জন। আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন ২ জন ও ১জন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক । সাবেক এই ছাত্র নেতাদের মধ্যে অনেকে বেঁচে নেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগে সাবেক ছাত্রনেতাদের নেই কোন পদ। জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকীরা সবাই পদহীন রয়েছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ছাত্রলীগের কমিটি হয় ১৯৮৭ সালে। সেই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাছুদ সাজ্জাদ সভাপতি হন। বর্তমানে তিনি শহীদ নূর আলী কলেজের শিক্ষকতা করছেন। তার সময়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মতিয়ার রহমান মতি। এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আনিচুর রহমান মানু। তিনি বর্তমান কালীগঞ্জ কোয়ালিটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক।
১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি হন মতিয়ার রহমান মতি। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদেও ২বার দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তিনি। তার সময় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন উপজেলার খামার মুন্দিয়া গ্রামের আদিল উদ্দীন মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মন্নু। তিনি ১০/১২ বছর আগে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সংগঠনের আহবায়ক ছিলেন রেজাউল ইসলাম। রাজনীতিতে থাকলেও তেমন সরব নন। তিনি বর্তমানে ব্যবসায়ী। তার সময় যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চাকুরী করেন।
১৯৯৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজাউল করিম রেজা। ১৯৯৮ সালে দলীয় কোন্দলে দুর্বৃত্তদের হাতে মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ মাঠে নিহত হন। রেজা সভাপতি থাকা কালীন সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন মোঃ ইদ্রিস আলী। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন। রেজা মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন নজরুল ইসলাম। কিছুদিন পরে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
২০০১ সালে আবার উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি করা হয়। আহবায়ক হন মোস্তাফিজুর রহমান বিজু। তিনি ২০১১ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য পদ লাভ করেন। বিজুর সময় যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার। তিনিও বর্তমানে ব্যবসা করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সোহেল সভাপতি থাকাকালীন সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন নাছির উদ্দীন পলাস। রাজনিতী ছেড়ে তিনি চাকুরীতে চলে যান। তিনি বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকে চাকুরী করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন জাকির হোসেন। তিনি বর্তমানে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে চাকুরী করেন।
২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদে ছিলেন ইসরাইল হোসেন। ২০১৫ সালে তিনি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ইসরাইল শিক্ষকতা শুরু করলে ২০১৭ সালে সহ-সভাপতি আনিচুর রহমান মিঠু মালিতা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন। ইসরাইলের সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী রিপন। বর্তমানে দলীয় কোন পদ নেই তাদের।
বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদে রয়েছেন মোঃ নাজমূল হাসান। তার বাড়ি মল্লিকপুরে। এ ছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হলেন মনির হোসেন সুমন। তার বাড়ি পৌরসভার আড়পাড়া গ্রামে। এরা দুজনই শিক্ষার্থী।
সংগঠনটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গ সংগঠন হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যে মণ্ডিত। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষার্থে প্রত্যেকটি আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তবে তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটের অপকর্মের ভারও সইতে হচ্ছে ছাত্রলীগকে।