মানি হাইস্ট’–এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। বাংলাদেশের দর্শকেরা দেখা শুরু করেছেন আরেকটু পর থেকে, কেননা তখনো এখানে নেটফ্লিক্সের এতটা প্রসার ছিল না।
আর মানি হাইস্টের সেই যাত্রা শেষ হলো গতকাল শুক্রবার। প্রচারিত হলো শেষ পঞ্চম পর্বের শেষ পাঁচ এপিসোড। শেষ পর্যন্ত কেমন হলো এর শেষটা?
দ্বিতীয় সিজনের পঞ্চম পর্বের প্রথম পাঁচটি এপিসোড প্রচারিত হয়েছিল গত ৩ সেপ্টেম্বর। ঘোষণাই ছিল শেষ পাঁচটি এপিসোড আসবে ৩ ডিসেম্বর।
টোকিও কি আসলেই মারা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কি সোনা নিয়ে সবাই বের হতে পারবে, কীভাবে বের হবে, আর কে কে মারা যাবে, প্রফেসরের প্ল্যান-বি বলে কি এবার কিছু আছে—এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন ছিল মানি হাইস্ট ঘিরে।
মানি হাইস্টের প্রথম সিজনটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। স্পেনের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক অ্যানটেনা ৩–এ এর প্রচার শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ মে এবং শেষ হয় একই বছরের ২৩ নভেম্বর।
পরে এর প্রচারস্বত্ব কিনে নেয় নেটফ্লিক্স এবং একই বছরের ২০ ডিসেম্বর তারা প্রচার করা শুরু করে। প্রথম সিজনের দ্বিতীয় পর্ব প্রচার হয় ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল।
প্রথম সিজনে প্রফেসর ডাকাতির জন্য বেছে নিয়েছিলেন রয়্যাল মিন্ট অব স্পেনকে, যেখানে দেশটির মুদ্রা বা অর্থ ছাপানো হয়। সেখান থেকে তারা ২ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ইউরো ছেপে তা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য গায়ের জোর বা অস্ত্রবাজির সুযোগ ছিল কম, বরং প্রায় পুরোটাই ছিল বুদ্ধির খেলা।
মানি হাইস্ট নেটফ্লিক্সের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ। সন্দেহ নেই, প্রচুর ব্যবসা এনে দিয়েছে সিরিজটি। জনপ্রিয় হলেই পরের সিজন তৈরির প্রসঙ্গ চলে আসে। ২০১৮ সালেই নেটফ্লিক্স পরের সিজনের ঘোষণা দেয়।
গল্প অনুযায়ী বলা যায়, প্রফেসর বাধ্য হন নতুন করে আবার একটি ডাকাতির পরিকল্পনা করতে। ফলে প্রথম ডাকাতির আগে যে দীর্ঘ প্রস্তুতি ছিল, পরেরবার তা আদৌ ছিল না। এবারের ডাকাতি ছিল ব্যাংক স্পেন বা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। লক্ষ্য মজুত থাকা ৯০ টন সোনা ডাকাতি করা।
দ্বিতীয় সিজন তিন পর্বে শেষ হয়েছে। এর শুরু হয়েছিল ২০১৯–এর ১৯ জুলাই। কোভিড–১৯–এর কারণে সিরিজটি শেষ হতে সময় বেশি লেগেছে। আর প্রথম সিজনে বুদ্ধির খেলার ভূমিকা বেশি থাকলেও পরেরটিতে অস্ত্রের ব্যবহার অনেক বেশি।
প্রথম সিজনেই মেরে ফেলা হয় প্রফেসরের ভাই বার্লিনকে। সন্দেহ নেই, প্রথম সিজনে বার্লিন ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। দ্বিতীয় সিজনে ফ্ল্যাশব্যাকে বারবারই ফিরে এসেছে বার্লিন।
শেষ পাঁচ পর্ব না দেখলে মনে হবে বার্লিনকে বারবার নিয়ে আসা ছিল অহেতুক। বিশেষ করে তার পুরোনো ডাকাতির ঘটনা, স্ত্রী তাতিয়ানাকে পরিচয় করানো, এর মধ্যেই আবার ছেলেকে নিয়ে আসা—কিছুটা ছন্দপতনের মতোই। তখন মনে হয়েছিল, বার্লিনের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করার জন্যই এভাবে তাকে নানা ছুতোয় পর্দায় নিয়ে আসা।
ভুল ভাঙল শেষ পাঁচ এপিসোড দেখার পরে। আবার টোকিও ছিল পুরো গল্পের সূত্রধর। সেই টোকিও মারা যাওয়ায় মনে হয়েছিল সবার পরিণতি মনে হয় এ রকমই হবে। সুতরাং শেষটা নিয়ে ছিল অসীম কৌতূহল।
ভারী ভারী সব অস্ত্র, গ্রেনেড, ধ্বংসযজ্ঞ—কী ছিল না দ্বিতীয় সিজনে। ফলে ডাকাতির সফলতা নিয়ে ছিল অনেক আগ্রহ। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না, পুরো সিজনজুড়ে এর কোনো ইঙ্গিতও ছিল না।
এবার প্রফেসরের অনেক পরিকল্পনাই কাজ করছিল না, আবার বিকল্প পরিকল্পনাও (প্ল্যান বি) দেখা যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নেরই উত্তর পেয়েছে দর্শক।
বিশেষ করে শেষ পাঁচ পর্বে অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে সবচেয়ে কম, বুদ্ধির খেলাই ছিল বেশি। আর ছিল অর্থনীতির কিছু মৌলিক ব্যাখ্যা। অর্থের সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি, শেয়ারবাজার, মজুত সোনার মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া—গল্পের উপসংহারে যেতে কত রকম ব্যাখ্যাই না দিতে হয়েছে।
সত্যিকার অর্থেই মানি হাইস্টের শেষটা ছিল মহা সমাপ্তি বা ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’-র মতোই। দেশের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে যারা, তারা দর্শকদের চোখে ভিলেন বা খল চরিত্র। আর যারা ডাকাতি করছে, তারাই নায়ক।
শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে থেকে গল্প উপসংহারে নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ ছিল না। প্রথম সিজন শেষে দর্শকদের যে হাসিমুখ, একদম শেষেও তা থাকবে কি না—সেটাও ছিল বড় প্রশ্ন।
তবে নানা ধরনের টানাপোড়েনের মধ্যেও সিরিজের প্রতিটি চরিত্রকে যেমন শেষ পর্যন্ত প্রফেসরের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হয়েছে, তেমনি দর্শকদেরও আস্থা রাখতে হয়েছে, আশায় থাকতে হয়েছে।
আর এ জন্য পর্দায় চোখ রাখতে হয়েছে সর্বক্ষণ। মানি হাইস্ট আপনাকে আসলেই চোখ ফেরাতে দেবে না। এটাই নির্মাতাদের বড় কৃতিত্ব।