গতকাল শনিবার সকাল ১০ টার দিকে কেরুজ গ্যারেজ সেডে আয়োজন করা হয় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা। নির্ধারিত সময়েও শুনশান ছিলো সভা চত্বর। সাড়ে ১১ টার পর থেকে শ্রমিক সংগঠন থেকে দলেদলে মিছিল সহকারে নেতারা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে হাজির হন সভাস্থলে।
দুপুর ১২ টার দিকে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। পবিত্র কোরআন তেলোয়াত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তৈয়ব আলীর সভাপতিত্বে সভায় বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ ৫ পৃষ্টা বিশিষ্ট প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ।
২০১৯ সালের আয় দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ টাকা। ওই বছরেই ব্যয় করা হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮১৭ টাকা। ২০২০ সালে আয় হয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৩ টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ টাকা। ফলে ২ বছরের আয়-ব্যয় হিসাবে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ৬ লাখ ৮ হাজার ৫৯৩ টাকা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন সভাপতি প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, বর্তমান পরিষদের সহ-সম্পাদক খবির উদ্দিন, আবু সাঈদ, হাজি আকরাম আলী, এসএম কবির, মোহন ইসলাম, নুর ইসলাম, ইদ্রিস আলী, হাফিজুল ইসলাম, সাইফ উদ্দিন সুমন প্রমুখ।
সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থাপনায় আরো আলোচনা করেন সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ, রেজাউল করিম, ইসমাইল হোসেন, বাবর আলী, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) রাব্বিক হাসান, সদস্য সচিব ব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) ফিদাহ হাসান বাদশা, উপ-ব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) আবুল ফাত্তাহ, গ্যারেজ ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ ও সহব্যবস্থাপক (ভূমি) জহির উদ্দিনকে।
গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাত্র ১ দিন আগে। সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হলো ৬ দিন আগে। কেরুজ নির্বাচন মানেই মহাৎসব। এ নির্বাচন গোটা জেলাবাসীকে জানান দেয়। গোটা মরসুম জুড়ে নির্বাচনী বাতাশ থাকে গরম। কেরুজ আঙ্গিনা ভোটার ও বহিরাগতদের পদচারনায় মুখরিত থাকে। প্রার্থীদের দৌঁড়-ঝাপ-ভোটারদের দলে ভেড়ানোর কায়দা-কৌশল অবলম্বনে থাকে না কমতি। ভোটারদের মন গলাতে বানের পানির মতো খরচ করা হয়ে থাকে টাকা। দীর্ঘদিনের এ ধারাবাহিকতা খানেকটা থমকে গেছে এবারের নির্বাচনে। ভোটের বাকী মাত্র ১৫ দিন।
নেই নির্বাচনী আলোচনা, প্রচারণা, দৌঁড়-ঝাপ, সংগঠন অফিসগুলোতে নেই ভোটারদের আনা-গোনা, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আলোক সজ্জায় সজ্জিত সংগঠন কার্যালয়গুলো পেট ভোজনের আয়োজন পড়ছেনা চোখে। অনেকটাই যেন ভূতরে অবস্থায় পরিণত হয়েছে কেরুজ এলাকা। এবার প্রার্থীরা ভোটার ও সমর্থকদের নিয়ে কোনই মহড়া দিচ্ছেনা। দেখাচ্ছেনা দল ভারী দেখানো শো-ডাউন। নেপথ্যে রয়েছে বহু রহস্য। অনেকেই মন্তব্য করে বলেছে, চাকে সেই মধু নেই বলেই কি মৌমাছির গুনগুনানি বন্ধ ? থলেতে কি নেই নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য ? নাকী অন্যান্য মিল বন্ধের আতংক বিরাজ করছে কেরুতেও ? এখনো পর্র্যন্ত কি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রধান হাতিয়ার মদ বিক্রয় কেন্দ্রের এজেন্টদের দেখা মিলেনি ? নাকী এজেন্টরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে ?
দীর্ঘদিন সংগঠন কার্যালয়গুলো জনমানবহীন থাকলেও হঠাৎ করেই গতকাল থেকে জমজমাট অবস্থায় পরিণত হওয়ার নেপথ্যের রহস্যই বা কি ? তবে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই সংগঠনগুলো ছিলো কর্মী, সমর্থক, ভোটার ও বহিরাগতদের ভীড়। প্রত্যেক সংগঠন থেকে বিশাল র্যালি সহকারে সভাস্থলে যোগদান করা হয়েছে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন, তৈয়ব সংগঠনের কর্ণধর বর্তমান পরিষদের সভাপতি তৈয়ব আলী ও সবুজ সংগঠনের কর্ণধর ফিরোজ আহমেদ সবুজ।
সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন মাসুদ সংগঠনের কর্ণধর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান ও প্রিন্স সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স। এ ছাড়া সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ সদস্য পদে অসংখ্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। কবে নাগাদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তফসিল ঘোষণা করবে তা এখনো জানা যায়নি।