প্রকাশ্যে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক সেবন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৮ টার দিকে মেহেরপুরের মুজিনগর উপজেলার কোমরপুওে স্থানীয়রা তাকে ধরে এনে বাজারের একটি কাঁঠাল গাছে বেঁধে রাখেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রা।
আবুল কালাম আজাদ কোমপুর গ্রামের হালদারপাড়া এলাকার জুলমত আলীর ছেলে ও কোমরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী। চাকরির নাম করে এর আগে টাকা নেওয়ার ভিডিও চিত্রও মেহেরপুর প্রতিদিনের কাছে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কোমরপুর বাজারের নৈশ প্রহরি হতদরিদ্র আজিবর রহমান লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনছিলেন। এসময় আবুল কালাম আজাদ নৈশ প্রহরি আজিবরকে চাল ধরে দেওয়ার নাম করে ৮শ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। তাকে সন্ধ্যার দিকে ধরে এনে বাজারের একটি গাছের সাথে বেঁধে উত্তম মাধ্যম দেন। খবর পেয়ে কোমরপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মাইনুল ইসলাম আবুল কালাম আজাদকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নেন।
কোমরপুর মাধ্যমি বিদ্যালয়ের কর্মচারি আব্দুল মাবুদ বলেন, আবুল কালাম আজাদ ধাপ্পা দিয়ে এলাকার বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে। সে কয়েক জনের কাছ থেকে চাকুরী দেওয়ার নাম করে প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে, সে প্রতিমন্ত্রীকে সরাসরি ফোন দিলে প্রতিমন্ত্রী তার ফোন রিসিভ করেন।
কোমরপুর ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল বাশার বলেন, আবুল কালাম আজাদকে অনেকেই ভাল করতে চেয়েছিলেন। এমনকি প্রতিমন্ত্রী তাকে কোমরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকুরিও নিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার স্বভাব পাল্টাইনি। সে চাকুরী দেওয়ার নাম করে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। ইতোমধ্যে তার নামে বেশ কয়েকজন আদালতে মামলাও করেছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক যুবক জানান, আবুল কালাম আজাদের কাছে এই গ্রামের এমন কোনো লোক নেই যারা টাকা পাবেনা। ৫ শ থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা সে বিভিন্ন কায়দায় মানুষের কাছ থেকে নিয়েছে। তাকে কিছু বলতেও পারেনা মানুষ জন। কারন, সে প্রতিমন্ত্রীর লোক হিসেবে এক নামে পরিচিত। তারা এও বলেন, আজকে জনগণ তাকে ধরে বিচার করতে চাইলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাঁচিয়ে দেবে দেখবেন।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহম্মেদ আলী বলেন, তাকে বারবার বাঁচানো হয়েছে। এবারও একটু চেষ্টা করে দেখি। আবুল কালাম আজাদকে মাদক থেকে সরিয়ে আনা যায় কিনা। আবুল কালাম আজাদকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতেও দেখা গেছে প্রধান শিক্ষক আহম্মেদ আলীকে। তিনি আরো বলেন, আবুল কালাম আজাদের ছোট শিশু ছেলের কথা ও তার সাম্প্রতিক সময়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীর চাকুরি হওয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা লোকজন বসে ছাড়িয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া করার চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিমন্ত্রী তাকে কোমরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচ্ছনত্না কর্মী পদে চাকুরি নিয়ে দিয়েছেন। এখনো তার চাকুরিটি স্থায়ী হয়নি।
এ ব্যাপারে কোমরপুর পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এএসআই মাইনুল ইসলাম বলেন, আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, চাকুরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ শুনেছি। চাকুরি দেওয়ার নাম করে কাঁঠালপোতা গ্রামের একজন ও কোমরপুর গ্রামের একজন ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছিল। আমি তাদের কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। তারা কোর্টে মামলা করেছে বলেও শুনেছি। আজকে সে একজন নাইট গার্ডের চাল কেনার টাকা নিয়ে পালিয়েছিল। গ্রামবাসি তাকে ধরে এনে গাছে বেধে মারপিট করছিল। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়েছি। তবে, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। আজিবর রহমানকে তার ছিনিয়ে নেওয়া টাকা পরিশোধ করাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল বলেন, বিষয়টি জেনে জানাচ্ছি। তবে পরে তিনি আর জানাননি।