কোলন বা বৃহদন্ত্রে নানান সমস্যা দেখা দেয়। কোলনের সমস্যায় অনেক কষ্ট করতে হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে সেটি ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
কোলনের সমস্যাগুলোর মধ্যে পলিপ অন্যতম। এই রোগ সঠিক সময়ে নির্ণয় করা জরুরি। কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের কোলোরেকটাল সার্জন অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান।
বৃহদন্ত্র হচ্ছে— আমাদের পরিপাকতন্ত্রের শেষের অংশ। সেখানে নানা রকম রোগ হতে পারে; যেমন— ডিসেন্ট্রি, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রনস ডিজিজ, টিবি, কোলোন পলিপ, ক্যান্সার ইত্যাদি।
এদের মধ্যে সাধারণ সমস্যা হচ্ছে কোলন পলিপ। পলিপ হচ্ছে— আঙুলের মাথার মতো একটি অস্বাভাবিক অংশ, যা কোলনের দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
সাধারণত ৩০ বছরের পর বৃহদন্ত্রে এই পলিপ দেখা দেয়, অবশ্য ছোটবেলাতেও কিছু কিছু পলিপ দেখা দিতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে— পলিপ কেন এত জটিল।
কোলন পলিপ নিয়ে বেশি করে ভাববার কারণ হচ্ছে, এখান থেকেই কোলন ক্যান্সারের সূত্রপাত হতে পারে। আর বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার যে কতটা জটিল সেটি তো সবারই জানা।
লক্ষণ
সাধারণত এই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, নিঃশব্দে শরীরে বেড়ে ওঠে, আর যখন লক্ষণ দেখা দেয়, তখন মলের সঙ্গে রক্ত, কাল মল হওয়া, রক্তশূন্যতা, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়ার মতো লক্ষণ হওয়া এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার না হওয়ার মতো সমস্যা হয়।
কীভাবে বুঝবেন
পাইলস ও পায়ুপথের অন্যান্য রোগের মতো কোলন পলিপেও রক্ত যায়। এ সমস্যাকে রোগীরা পাইলস ভেবে ভুল করেন। কোলন পলিপ নির্ণয়ের আধুনিক পরীক্ষা হচ্ছে কোলোনোস্কোপি। একমাত্র এই পরীক্ষার মাধ্যমেই কোলন পলিপ নির্ণয় করা যায়। কোলনের কোনো স্থানে পলিপ দেখা দিলে পুরো কোলন কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে আর কোনো পলিপ আছে কিনা। কোলোনোস্কোপির মাধ্যমে এই পলিপ সরাসরি দেখা যায়, এর ছবি তোলা যায় এমনকি ভিডিও করা যায়।
চিকিৎসা
কোলন পলিপ কোলোনোস্কোপির মাধ্যমেই অপসারণ করা যায়, অর্থাৎ এর জন্য কোনো বড় অপারেশনের প্রয়োজন নেই। রোগীকে অজ্ঞান করারও কোনো প্রয়োজন নেই।
কয়েক ঘণ্টা পরেই পলিপ অপারেশনের রোগী বাসায় ফিরে যেতে পারেন।
পলিপ অপারেশনের পর পরই রোগী স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন। কোলন পলিপ অপসারণের পর সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হয় কী ধরনের পলিপ বা তাতে ক্যান্সার হয়েছে কিনা।
কোলন পলিপ অপারেশনের পর চিকিৎসক প্রায়ই কয়েক বছর পর পর কোলোনোস্কোপির উপদেশ দেন। কারণ কিছু কিছু পলিপ কোলোনের অন্যান্য স্থানে আবার হয়। আবার বিশেষ ধরনের পলিপ তথা এডেনমেটাস পলিপ অপারেশনের পরও সেখানে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হতে পারে, তাই এসব ক্ষেত্রে বারবার কোলোনোস্কোপি করা জরুরি। তাই মলে রক্ত গেলে পলিপ আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।