এটি এমন একটি দৃশ্য, যা আমাদের অনেকেই মুখোমুখি হয়েছেন বা অনেকেই মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। হঠাৎ করেই আপনার বা আপনার প্রিয়জনের হালকা জ্বর, শরীরে ব্যথা, ঝাঁকুনি বা শুকনো কাশি শুরু হতে পারে। খাবারে স্বাদ বা গন্ধ নাও পেতে পারেন। অনেক সময় তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা শরণাপন্ন হওয়ার পরপরই হয়তো জানতে পারবেন করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে গেছেন।
এরপরের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। যদি শ্বাসকষ্ট বেশি হতে থাকে তবে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। যদি তৎক্ষণাৎ বিপজ্জনক অবস্থা না থাকে তবে জায়গা হচ্ছে কোয়ারেন্টিন। সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের সমস্যা বা বয়স ৬০–এর বেশি হলে উপসর্গ বুঝে বাড়িতেই সেলফ কোয়ারেন্টিন হয়ে যেতে পারে আশ্রয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে হালকা অসুস্থ হলে বাড়িতে থেকেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তাই চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বাকি লক্ষণগুলোসহ অতিরিক্ত কোনো ঝুঁকি থাকলেও বাসায় থাকতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন মনে করলে চিকিৎসা নিতে হবে। তবে, এর জন্য আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। গণপরিবহন, রাইড শেয়ারিং বা রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
Lifebuoy Soap
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোয়ারেন্টিনে জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় আপনি কী ব্যবস্থা নেবেন এবং আপনার সঙ্গে বাড়িতে কে থাকবে তা আগেভাগেই জানতে হবে। এ সময়ের করণীয়গুলো জেনে নিন:
আগাম প্রস্তুতি নিন
ভালো পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুতি মূল বিষয়। পরিবারের কেউ বা নিজে আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রিয়জন, আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধুর সঙ্গে ফোন নম্বর ও ই মেইলে যোগাযোগ করে রাখুন। যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বিশেষ কিছু লাগবে কিনা জেনে নিন। জরুরি নম্বরগুলো এ সময় কাজে লাগে। স্থানীয় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবাদাতা, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখুন। এর বাইরে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো পালন করুন। এ অভ্যাস আমরা নিয়মিত পালন করার পাশাপাশি জীবাণু, ঠান্ডা ও ফ্লু থেকে সুরক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। হাত ধোয়া না থাকলে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
সিডিসির পরামর্শ হচ্ছে, কোনো কিছু স্পর্শ করার পর নিয়মিত হাত ধুতে হবে এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বাথরুম, টেবিল কাউন্টার ছাড়াও সুইচ, কল এবং সিঙ্ক, ক্যাবিনেটের হাতল, দরজার নব, ফোন এবং কিবোর্ড জীবাণুমুক্ত রাখুন। এ মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ি ও কাজ থেকে অনেক সময় দূরে থাকা সম্ভব হয় না বলে অন্যদের সঙ্গ যতটা কম সংস্পর্শে আসা যায় তা খেয়াল রাখুন।
বাইরের খাবার এবং আউটডোর অনুশীলনের মতো জীবনের প্রয়োজনীয়তাগুলি ত্যাগ করার পাশাপাশি ৬ ফুট দূরত্বের নিয়ম মেনে চলুন। মামা-বাবা ও অভিভাবককে আগে থেকেই তার শিশুদের জন্য পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
যেসব দরকারি জিনিস হাতের কাছে রাখবেন
১. জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার এবং তা পরিষ্কার করার উপাদান যেমন আইসোপ্রোপিল অ্যালকোহল
২. জ্বর কমাতে পারে এমন ওষুধ
৩. ফেস মাস্ক, গ্লাভস বা একবাক্স রাবার
৪. দুই মাস বা তিন মাসের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া জরুরি ওষুধ
৫. হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান
৬. টিস্যু যা কাশি ঠেকাতে কাজে লাগবে
৭. নিয়মিত পরিষ্কারক উপকরণ
৮. জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপকরণ
নিজেকে প্রিয়জনের কাছ থেকে আলাদা করুন
করোনায় সন্দেহজনক বা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে, সিডিসি বলেছে যে আপনার বা আপনার প্রিয়জনের পরিবারের অন্য লোকদের থেকে দূরে আলাদা ঘরে (আলাদা বাথরুম) থাকা উচিত। একা থাকলে এটা অসম্ভব নয়। তবে চ্যালেঞ্জ হলো আপনার উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ ও নিজের যত্ন নেওয়া। ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকতে হবে। কেউ ভার্চ্যুয়াল সব খোঁজখবর নিয়মিত নিতে পারবে সেটাও ঠিক রাখতে হবে। যদি পরিবারের সঙ্গে থাকতে হয় তবে নিজেকে পৃথক রাখা স্বল্প জায়গার মধ্যে অনেক কঠিন। কারণ, বাড়িতে শিশুরাও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিশু বিশেষজ্ঞ তানিয়া অল্টম্যান বলেন, ‘বাড়িতে বয়স্ক বা অসুস্থ কেউ থাকলে তাকে যেদিকে শিশুদের যাতায়াত কম সেখানে পৃথক রাখতে হবে। পরিবারের কাজ ভাগ করে নিতে হবে। কেউ একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখবেন, কেউ শিশুদের দেখবেন।’ আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের মুখপাত্র চেনি র্যাডেস্কি বলেন, একক মা বা বাবার জন্য বড় সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো যোগযোগ রাখতে হবে। বাজার-সদাই করে দেওয়ার জন্য বা ওষুধ কিনে দেওয়ার জন্যও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
মাস্ক পরুন ও জীবাণুমুক্ত থাকুন
যদি অসুস্থ বোধ করেন তবে অন্য মানুষের আশপাশে থাকলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। চিকিৎসকের কাছে গেলে বা হাসপাতালে গেলেও অবশ্যই মাস্ক পরে থাকবেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাস্ক না পরলে হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। যারা আপনার যত্ন নেবেন তাঁদের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরার বিষয়টি এবং আপনার ঘরের আশপাশে যারা আসেন তাদের মাস্ক পরতে বলুন। সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন অল্টম্যান। সুস্থ যিনি খাবার ও ওষুধ দরজার গোড়ায় পৌঁছে দেবেন তিনি অবশ্যই হাত ধোবেন। খালি প্লেট ধরতে গ্লাভস ব্যবহার করবেন। গরম পানি ও সাবান দিয়ে খাবারের ঘটি-বাটি, প্লেট ধোবেন। খাবার গ্লাস, কাপ, চামচ, প্লেট অন্য কারও সঙ্গে মেশাবেন না। তোয়ালে বা বিছানা শেয়ার করবেন না।
সবাইকে অসুস্থ হতে দেবেন না
বাড়িতে বা ঘরে যথেষ্ট আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। সুযোগ পেলে ঘন ঘন হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন। যেসব জায়গা ঘন ঘন স্পর্শ লাগে সেগুলো জীবাণুমুক্ত রাখুন। রেফ্রিজারেটর বা মাইক্রোওয়েভের হাতলও যেন বাদ না যায়। যতটা সম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। যদিও তা করা কঠিন। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও ভালো ঘুমের ওপর জোর দিন। অসুস্থ মানুষের আশপাশে পোষা প্রাণী যাতে না যেতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
কোয়ারেন্টিন যখন শেষ হবে
সম্প্রতি চীনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়ারেন্টিনে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত থাকতে হতে পারে। সংস্পর্শে আসার ১২তম দিনের পর থেকেই ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষজ্ঞরাও কমপক্ষে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন করার পরামর্শ দেন। এতে যেকেউ আক্রান্ত হলো তা বোঝা যায়। করোনাভাইরাসে কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষে জ্বর না থাকলে বা অন্য উপসর্গ থেকে উন্নতি হলে ২৪ ঘণ্টায় দুটি পরীক্ষা করা হয়। দুটি পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল আসলে পুরোপুরি নির্দেশনার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
সুত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন