দিন দিন ক্যান্সার যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সচেতন রোগীর প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। কাজেই ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়।
ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ : ১) অল্প অল্প বা বেশি জ্বর হওয়া, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া, ২) স্বাভাবিকের চাইতে বা অতীতের চাইতে ক্ষুধা কমে যাওয়া, ৩) শরীরের যে কোনও জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া। কখনও এই চাকায় ব্যাথা হতে পারে, কখনও ব্যাথা নাও হতে পারে, ৪) দীর্ঘস্থায়ী কাশি থাকা, কোনও কিছুতেই না সারা। কিংবা অনেকদিন যাবত গলা ভাঙ্গা থাকা, ৫) মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসা। ঘন ঘন ডায়রিয়া,কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া, ৬) বিনা কারণেই খুব ক্লান্ত বোধ করা, ৭) অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া।
ক্যান্সার প্রতিরোধক খাদ্য সমূহ:
সবুজ শাক-সবজি : পালং শাক, কেইল, কলার্ড গ্রীন, রোমেইন ও আরুগুলা লেটুস, ওয়াটার ক্রেস (হেলেঞ্চা শাক) সহ দেশীয় সবুজ শাক-পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলগুলো, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইম। এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও আছে গ্লুকোসাইনোলেটস, এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল উপাদান এবং নিষ্ক্রিয় কার্সিনোজেনস। যা টিউমার সৃষ্টি রোধ, ক্যান্সার কোষ ধ্বংস ও ক্যান্সার স্থানান্তরণে বাধা প্রদান করে। কাজেই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-পাতা থাকা আবশ্যকীয়।
হলুদ: হলুদে বিদ্যমান ‘কারকিউমিন’ প্রদাহজনিত সমস্যা বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দেহকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলে। শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করতে চাইলে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন অথবা মাছ ও মাংসের তরকারিতে প্রয়োজন মতো ব্যাবহার করতে পারেন।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য : প্রক্রিয়াকরণ দুগ্ধজাত খাবার যেমন টক দই হলো প্রোবায়োটিক বা ভালো ব্যাক্টেরিয়ার উত্তম উৎস। প্রোবায়োটিক টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে। গরু ও ছাগলের দুধ এবং পনিরে রয়েছে সালফার প্রোটিন ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা ক্যান্সার রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি। দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আছে। এই ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে ক্যালসিয়াম রেকটাল সহ নানা রকমের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ব্রেস্ট এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
মাছ : গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মাছের ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড -এন্টিইনফ্ল্যামেটরি, এন্টিটিউমার ও এন্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষাক্ততা কমাতে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ফলদায়ক ভূমিকা রাখে। তৈলাক্ত মাছ খাদ্য তালিকায় রাখুন।
গ্রীন টি : ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ মেটাস্ট্যাসিস বা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া। গ্রীন টিতে আছে পলিফেনোলিক কম্পাউন্ড, ক্যাটেচিন, গ্যালোক্যাটেচিন এবং ইজিসিজি (এন্টিঅক্সিডেন্ট)। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, টিউমার বৃদ্ধি রোধ ও ক্যান্সার স্থানান্তরণ অর্থাৎ মেটাস্ট্যাসিস রুখে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন গ্রীন টি পান করুন।
মাশরুম: উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মাশরুম রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
স্বাস্থ্যকর অপরিশোধিত ভোজ্য তেল: নারকেল তেল, তিসির তেল এবং এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্ত্রে পুষ্টি যোগায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জলপাই তেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা প্রদাহ কমায়। এমনকি ব্রেস্ট ও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
বাদাম ও বীজসমূহ : চিনাবাদাম ভিটামিন-ই এর সব থেকে ভালো উৎস। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ চিনাবাদাম কোলন, ফুসফুস, যকৃত এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সকালে কিংবা বিকালের নাস্তায় চিনাবাদাম রাখুন।