নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে হামলা করে ৫১ জনকে হত্যায় অভিযুক্ত ব্রেন্টন টারান্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের একটি আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ব্রেন্টন টারান্টের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ারও কোনো সুযোগ থাকবে না। এই প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হলো। দণ্ডাদেশ দেয়ার সময় বিচারক মন্তব্য করেন যে, ব্রেন্টন টারান্ট পরিকল্পিতভাবে দু’টি মসজিদে হামলা করেন এবং তিনি তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত নন।
গত বছরের ১৫ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে বন্দুক নিয়ে গুলি করতে শুরু করে ওই হামলাকারী। টানা চতুর্থদিন শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন ক্রাইস্টচার্চ আদালতের বিচারক ক্যামেরন ম্যান্ডার।
রায় ঘোষণার সময় আদালত কক্ষে উপস্থিত টারান্টের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আপনি নিজেকে মানসিকভাবে চরম অসুস্থ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যে কি না নিজের থেকে ভিন্ন মনে করা অন্য মানুষদের ঘৃণা করে। আপনি যে ক্ষতি করেছেন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দেননি। যদিও আমি আপনার (আদালতের) এই প্রক্রিয়াগুলো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ ত্যাগ করার প্রশংসা করছি, কিন্তু আপনাকে মোটেও অনুতপ্ত বা লজ্জিত দেখাচ্ছে না।’
শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী টারান্টের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আপনি একটি গণহত্যা চালিয়েছেন। আপনি নিরস্ত্র ও প্রতিরোধবিহীন মানুষদের হত্যা করেছেন।’
দণ্ডের রায় ঘোষণার আগে উচ্চৈস্বরে দীর্ঘসময় ধরে টারান্টের হামলার শিকার ব্যক্তিদের বর্ণনা এবং তাদের স্বজনদের মন্তব্য পড়ে শোনান বিচারক ম্যান্ডার। এসময় আবেগ্লাপ্লুত হয়ে পড়ায় দু’বার থেমে যেতে হয় তাকে।
ভুক্তভোগী একটি পরিবারের কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘তাদের ক্ষতি অসহনীয়। আপনার কর্মকাণ্ড তাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে, যেভাবে ধ্বংস করেছে আরও অনেক পরিবারকে।’ এসময় নিহত প্রিয়মানুষটির নাম শুনে স্বজনদের অনেককেই চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় সর্বকনিষ্ঠ ভুক্তভোগীর নাম মুকাদ ইব্রাহিম। টারান্টের গুলিতে প্রাণ হারানোর সময় তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। মুকাদের কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘এত ছোট বাচ্চা হারানোর পর কোনও মা-বাবাই স্বাভাবিক হতে পারবে না।’
সূত্র- বিডি প্রতিদিন