নিত্য প্রয়োজনীয়সহ সবকিছুর চরম মূল্যবৃদ্ধিতে আয়ের সাথে ব্যয় মেটাতে কাহিল হয়ে পড়ছে এক শ্রেণির মানুষ। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও নিরব অভাব কুরে কুরে খাচ্ছে। লোক লাজ ভুলে বাধ্য হয়ে প্রকৃতি থেকে তরকারীর খোঁজে মাঠ ঘাটে আনুসন্ধান করছে তারা। কারণ আয়ের সাথে তারা তাল মেলাতে পারছেনা।
এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী সবজি কিনতে পারছেন না। যার ফলে ঝোপঝাড়ে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা বিভিন্ন জাতের ‘বুনো শাক-সবজি’র দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। এতদিন দরিদ্র মানুষদের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিলো ‘বুনো কচু শাক, সজিনার পাতা’ নটে শাক, কাটা নটে শাক। এখন মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারেও টান পড়েছে সংসার চালাতে। বাধ্য হয়ে উচ্চ মধ্যবিত্তরাও বন বাদাড়ের বুনো শাক খেতে বাধ্য হচ্ছে।
জেলা শহরের পৌর কলেজ পাড়ার সামসুল হক (প্রকৃত নাম না) মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালাতে কাহিল হয়ে পড়ছেন। বাড়ির নিকটে একটি ডোবার পাড়ে অবহেলা অযত্নে বেড়ে ওঠা কচু শাক তুলতে দেখা যায় তাকে। সে তার নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন- যে বেতন আসে তাতে মাসে একদিনও মাংস কিনতে পারিনা। বাধ্য হয়েই বুনো শাক তুলছেন। তারমতো অনেক পরিবারই বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু খেয়ে বাঁচার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছেন। বেতনের টাকায় মিলছে না সবজি বা মাছ, মাংস। তরকারির চাহিদা মেটাতে তাই তারা ঝোপঝাড় বা বসতবাড়ির আশেপাশে অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠে ঢেঁকি শাক, কলার থোর, কচু শাকসহ প্রকৃৃতিকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ, এসব শাক-সবজি টাকা দিয়ে কিনতে হয় না তাদের। তাছাড়া বাজারে এই বুনো শাকেরও এখন দাম বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুরে কর্মরত সরকারি এক ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা জানান- মাসে যে বেতন পান তাতে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ৪ সদস্যর সংসার কুড়িদিনের বেশি চলছেনা। বিপথগামিও হতে পারেননা। ১ হাজার টাকা কেজি মাংস খাওয়ার স্বপ্নও এখন ওই পরিবারে অধরা। তিনি জানান দুটি ডিম ভাগ করে চারজনকে খেতে হয়। আগে মোবাইলে নিকটজনদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, এখন যোগাযোগ রাখাতে পারেন না। আগে সকালে বাজার করতেন, এখন শহরের সাপ্তাহিক হাট থেকে সন্ধ্যার দিকে কম দামের সবজি কেনেন। মাঝে মাঝে পরিবার নিয়ে রিক্সায় ঘুরতেন। এখন আর ঘোরেন না।
মেহেরপুর জেলার প্রতিটি গ্রামেই অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার তরকারির চাহিদা মেটাতে প্রকৃতি নির্ভর হয়ে পড়ছে। সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের আবুল কাশেম নামের অবসরপ্রাপ্ত এক প্রবীন স্কুল শিক্ষক জানান, প্রায় তিন দশক আগেও মানুষের ঘরে অভাব-অনটন ছিল। সেই সময়েও বুনো সবজি খেতেন লোকজন। এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও করোনাকালীন সময় থেকে তরি তরকারী, চাল ডালের দাম বেড়ে যাওয়াতে আয়ের সাথে ব্যয় মেটাতে পারছেনা মানুষ। তাই সকাল অথবা বিকেল হলেই অনেক পরিবার বুনো সবজির খোঁজে মাঠে ঘাটে নেমে পড়ছেন। মাঠে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা কচুর জমিতেও কচুপাতা তুলতে ভিড় করে নারী পুরুষ।