বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এতোটাই অসুস্থ যে মাসাধিকাল ধরে তিনি এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন আছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সাথে সাক্ষাতে যান এবং প্রতিবারই ফিরে এসে এমন কাতর কণ্ঠে তার মুক্তি দাবি করেন। মঙ্গলবার রাতে যখন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা এভারকেয়ারে গেলেন তখন সাংবাদিকসহ বিএনপির নেতাকর্মীরাও উৎসুক ছিলেন।
সেই রাতে যখন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা হাসপাতালে অপেক্ষা করছিলেন খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের। তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই বলছিলেন- ‘আর বেশিক্ষণ না। অল্পক্ষণেই জানা যাবে আসলে কী পরিস্থিতি। কেনো নেতারা ছুটে গেছেন দেখা করতে।’ আশ্চর্যের বিষয় – নেতারা বেরিয়ে এলে বিভ্রান্তি কমবে ভাবছিলেন যারা, কিন্তু নেতাদের বক্তব্য শুনে তারা তারচেয়েও বেশি বিভ্র্রান্তিতে পড়েছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বাংলাদেশের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়ে আসলে কী ঘটে চলেছে। এই বয়সে যতগুলো জটিল সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার নেতাকর্মীরা কি আদৌ সহমর্মী? নাকি রাজনীতিতে তাকে এই মুহূর্তে ব্যবহারের কথা ভেবেই তারা হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার দিনগত রাত ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান নেতারা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এ সময় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। রাজনৈতিক কথা বলার মতো অবস্থায় নাই। আমরা কথা বলেছি, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। তাকে জানিয়েছি, আমরা এক দফার আন্দোলন করছি। সামনের মাসে আন্দোলন জোরদার করব।’ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, ‘আপনারা যারা বাইরে আছেন, তারা সবাই মিলে আন্দোলন করেন। আমি দেখতে চাই, আপনারা আন্দোলন করছেন, আন্দোলন করতে হবে।’ আমাদের এই আন্দোলনে তাঁর সমর্থন আছে। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এই সরকারের অধীনে নির্বাচনি ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।”
লক্ষ্য করুন মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, ‘রাজনৈতিক কথা বলার মতো অবস্থায়’ নেই। তাহলে? তারপরে তিনি বলছেন, খালেদা জিয়া ‘আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন’, খালেদা জিয়া নির্বাচনের ফাঁদে পা না দিতে বলেছেন’। এই পরের কথাগুলো মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে অরাজনৈতিক কথা? এগুলো খালেদা জিয়া সত্যিই বলেছেন তো? বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার বলছেন, উনি ‘খুব অসুস্থ’। হাসপাতালে খুব অসুস্থ মানুষ খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে সেদির রাতে হাসপাতালের বাইরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, দেশকে বাঁচাতে হলে এই আন্দোলনটা করতে হবে, দেশকে রক্ষা করতে এই আন্দোলনে বিজয়ী হতে হবে।’
এদিন হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মধ্যে ছিলেন- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। তাদের প্রত্যেকের কথায় ছিলো ‘খালেদা জিয়া আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন’।
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানান সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে এভার কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য দিতে চায় না। গণমাধ্যমকে নিয়মিত তথ্য জানান খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ। মঙ্গলবার যে নেতারা রাতে হাসপাতালে সাক্ষাত করেছেন এবং গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তাদের বক্তব্য উৎসুক মানুষের মনে বিভ্রান্তি কমাতে পারেনি, বরং বেড়েছে।