সংগ্রহের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় খুলনার বিভিন্ন উপজেলা ও বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পরীক্ষার জন্য আসা অনেক নমুনাই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক নমুনা কোনো রকমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্থাপিত করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাবের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরীক্ষাগার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাস একটি নতুন ভাইরাস। এ কারণে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাঁদের সংগ্রহ পদ্ধতি হয়তো ভালোভাবে জানা নেই, তাই এ সমস্যা হচ্ছে। প্রথম দিকে প্রায় প্রতিটি নমুনাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তবে সংগ্রহকারীদের সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার পর এখন সংগ্রহ করা নমুনা কিছুটা ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, প্রতিদিনই বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে। তবে সেসব নমুনার কোনোটিই সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। সঠিক পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। তবে যেভাবে নমুনা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রথম দিকে অর্থাৎ ৬, ৭ ও ৮ এপ্রিলের পাওয়া বেশির ভাগ নমুনাই নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে তিন শর মতো নমুনা বাতিল করতে হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একটি পরীক্ষাগারকে বায়ো-সেফটি পরীক্ষাগার হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আর সেখানেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে পিসিআর যন্ত্র। ৪ এপ্রিল পরীক্ষাগারটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যায়। পরীক্ষাগার–সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের পর ৭ এপ্রিল সেটি উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের প্রথম দিন পরীক্ষার জন্য বিভাগের বিভিন্ন জেলার ১২টি নমুনা পিসিআর যন্ত্রে বসানো হয়। পরদিন ১০টি বাড়িয়ে ২২টি পরীক্ষা করা হয়। আর গত বৃহস্পতিবার ৩৪টি, শুক্রবার ৩৭টি, শনিবার ২২টি ও রোববার ২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া সোমবার ৪৩টি ও মঙ্গলবার ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
খুলনায় পরীক্ষা করা ওই নমুনার মধ্যে চারটিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সোমবার ওই পরীক্ষাগারে প্রথমবারের মতো কোনো নমুনা করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ওই দিন যাঁর নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাঁর বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায়। পরদিন মঙ্গলবার দুজনের নমুনায় পাওয়া যায় করোনাভাইরাস। ওই দুজনের একজন খুলনা নগরের, অন্যজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার একজনের নমুনায় করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।
ওই পরীক্ষাগারের একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে আছেন মো. সেলিমুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬০-১০০টি পর্যন্ত নমুনা পাঠানো হচ্ছে। তবে কোনো নমুনাই শতভাগ সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ২০ শতাংশ নমুনা কিছুটা ভালো মানের। অন্যগুলোর মান একেবারেই ভালো নয়। এ কারণে অনেক নমুনা বাদ দিতে হচ্ছে, আবার অনেক নমুনা খুব কষ্ট করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।
পরীক্ষাগারের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম তুষার আলম বলেন, খুব বেশি নমুনা স্টক করে রাখা নেই। তবে প্রথম দিকে যেসব নমুনা পাওয়া গিয়েছিল, তার বেশির ভাগই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ কারণে অনেক নমুনা বাদ দিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, খুলনার পরিচালক রাশেদা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিকে পাওয়া নমুনাগুলোর বেশির ভাগই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তবে ওই সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। নমুনা সংগ্রহকারীদের কয়েকবার অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সূত্র-প্রথম আলো