ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বছর ধরে চালকের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স, রয়েছে চিকিৎসক সংকট ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানেও না কবে আসবে চালক ও পূরণ হবে চিকিৎসকদের শুন্যপদ।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ তালাবদ্ধ। ভেতরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। সামনে রাখা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস। ভেতরে যেতে বহির্বিভাগে দেখা মেলে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিচ্ছেন শত শত রোগীর চিকিৎসা। ওয়ার্ডগুলোতে শয্যা সংকটে মেঝেতে রয়েছেন রোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৮টি পদ রয়েছে অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে ১০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও ১৮ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। অথচ কর্মরত আছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজন এরমধ্যে দু’জন ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত। একজন কনসালট্যান্ট দিয়ে নানা ধরণের অস্ত্রোপচার সেবা দেওয়া হয়।
১৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে চার/পাঁচ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে প্রায়ই বাইরে থাকেন। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এদিকে রোগী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এক বছর ধরে নেই চালক। ফলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
জানা যায়, ২০০৩ সালে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শুরু থেকেই একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছিল রোগীদের। এরই মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে চালক শফিউদ্দীন অবসরে যান। তার পরিবর্তে কোনো চালক নিয়োগ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেবা। ফলে গ্যারেজে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার উপক্রম অ্যাম্বুলেন্সটি।
রোগীর স্বজনরা বলছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলাসহ কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজশাহী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে রোগী নিযে যেতে কয়েক গুন টাকা বেশী গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া থাকে নানা ভোগান্তি। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকলে মাত্র ২০ টাকা প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দিয়ে বাইরে রোগী নিয়ে যাওয়া যায়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোতে করে রোগী নিতে হচ্ছে। জরুরি মুহূর্তে ওই সকল গাড়ির চাকলেরাও গলাকাটা ভাড়া দাবি করে। প্রায় সময় দালালদের কাছে নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার উপক্রম হয়।
স্বজল হোসেন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, হরিণাকুণ্ডু থেকে ঝিনাইদহে রোগী নিয়ে গেলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া লাগে ৪০০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস চালকরা ভাড়া নেন দেড় হাজার টাকা। অনেকে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান। আগে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়ায় রোগী নিলে ভাড়া পড়ত ৭০০ টাকা। এখন তারা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৭৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তিন-চারজন চিকিৎসক দিয়ে এত মানুষের সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে একটানা আড়াইটা-৩টা পর্যন্ত চিকিৎসা দেন। তিনি প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩৫০ রোগী দেখেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জামিনুর রশিদ বলেন, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব সময় ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালকের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।