গরু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তিনজন অফিসারকে বরখাস্ত এবং ১২ জনকে বদলি করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) গত বছর থেকেই দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে গরু পাচার চক্রের সঙ্গে বিএসএফ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করছে।
বিবিসি জানায়, অন্তত ৪ বছর আগেই বাহিনীর মহাপরিচালকে এ বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন এক কমান্ড্যান্ট। তারপরও এত বছরে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বাহিনীটির ভেতরেই সেই প্রশ্নও উঠছে।
বিএসএফ’র কয়েকটি সূত্র বলছে, “সর্ষের মধ্যেই ভূত ছিল। যাদের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতি রোখা, গরু পাচার চক্রে জড়িত ছিলেন সেই সব সিনিয়র অফিসারদের একাংশও। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে, কিন্তু আরও অনেকেই জড়িত ছিলেন। তারা কেউ বিএসএফ থেকে অন্য বাহিনীতে চলে গেছেন বা তাদের যেতে দেওয়া হয়েছে, কেউ চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।”
বাহিনীর পূর্ব কমান্ডের প্রধান পঙ্কজ কুমার সিং বলেন, “সৎ কর্মীদের থেকে অসৎদের পৃথক করতেই হবে আমাদের। কর্মী-অফিসারদের ওপরে নজরদারি চালানোর জন্য যথেষ্ট কড়া ব্যবস্থা আছে। আজ না হোক একদিন পরে খবর পাবই আমরা যে কোন অফিসার বা জওয়ান কাদের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতি করছে। সেই ব্যবস্থার মাধ্যমেই কিন্তু অফিসারদের একাংশের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। আবার সিবিআই-ও আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছে। যাদের ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদেরই শাস্তি দেওয়া হয়েছে – বরখাস্ত করা হয়েছে।”
গরু পাচারের সঙ্গে যে বিএসএফ কর্মকর্তাদের একাংশ জড়িত— এ তথ্য জানিয়ে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি মহাপরিচালককে চিঠি দেন রাজ কুমার বাসাট্টা নামে এক কমান্ড্যান্ট।
তিনি লেখেন, দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্তের হেডকোয়ার্টার্স থেকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ আসত যে, কোম্পানি কমান্ডার এবং পোস্ট কমান্ডারেরা যেন পাচারকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে।
এ রকম নির্দিষ্ট অভিযোগ আসা সত্ত্বেও কেন তখন কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বাহিনীর ভেতরেই তো নজরদারি বিভাগ আছে, সিনিয়র অফিসারেরা আছেন। তারা কেন চোখ বুজে ছিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে পঙ্কজ কুমার সিং বলছিলেন, “এ বিষয়টা আমার জানা নেই, কারণ আমি বাহিনীতে যোগ দিয়েছি ২০২০ সালে। মহাপরিচালক যদি ২০১৬ সালে বিষয়টা জেনে থাকেন, নিশ্চয়ই তিনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, যেটা আমি জানি না।”
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করে, এমন একটি মানবাধিকার সংস্থা মাসুমের প্রধান কিরিটি রায় বলছিলেন, তাদের কাছেও অনেক তথ্য প্রমাণ আছে যে বিএসএফ’র সহায়তা নিয়েই গরু-মানুষ-নিষিদ্ধ ড্রাগ পাচার হয় সীমান্ত দিয়ে।
তিনি বলেন, “অজস্র প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, যা থেকে স্পষ্ট, যে বিএসএফ’র একাংশের মদদ ছাড়া সীমান্তে কোনও কিছু পাচার হওয়া সম্ভব নয়। গোটা বাহিনীকে দোষ দেব না, কিন্তু এক শ্রেণির জওয়ান এবং অফিসার পাচার চক্রের সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই যুক্ত।”
এদিকে বিএসএফ অভ্যন্তরে এই প্রশ্নও উঠছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বা যাদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বিএসএফ ক্যাডার অফিসার। কিন্তু শীর্ষ পদগুলোতে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস বা আইপিএস অফিসাররা তো ছিলেন- তাদের ভূমিকা কেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে না?