গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনৈতিক যোগসাজসে সার বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে তুলে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্তের আবেদন করেছেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাহারবাটি ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো: মনিরুল ইসলাম।
অভিযোগে সাহারবাটি, কাজিপুর, ধানখোলা, বামন্দীসহ বিভিন্ন এলাকায় এই অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগের কথা বলা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বর্তমানে মাঠের ফসল পাকা ও কর্তন অবস্থায় বিরাজমান। যার কারনে ডিলারদের গুদামে পূর্ব মূল্যের রাসায়নিক সার পর্যপ্ত পরিমাণ মজুদ রয়েছে। বিগত ১০ এপ্রিল থেকে সরকার সকল রাসায়নিক সারের মুল্য বৃদ্ধি করেছে। যার কারনে ১০ এপ্রিল মাসের মজুদকৃত পূর্ব মূল্যের সার আউশ ও পাট আবাদে এলাকার কৃষকদের পাওয়ার কথা। সূত্র মতে, ১০ এপ্রিল এর পূর্বের সার বামন্দী বাজারের মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার জেনিস ফারজানা তানিয়ার গুদামে ইউরিয়া ৫ হাজার বস্তা, টিএসপি সাড়ে ৪ হাজার বস্তা, ডিএপি সাড়ে ৫ হাজার বস্তা, এমওপি ৩ হাজার ৬০০ বস্তা মজুদ ছিল।
গাংনীর গাঁড়াডোব বাজারের মেসার্স এনআর এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটার এনামুল হোসেনের গুদামে ইউরিয়া ৪ হাজার ৮০০ বস্তা, টিএসপি ৪ হাজার ৬০০ বস্তা, ডিএপি ৩ হাজার ২ শ বস্তা, এমওপি ৪ হাজার ৯০০ বস্তা, মজুদ ছিল, বামন্দী বাজারের মেসার্স ইসলাম এন্টারপ্রাপ্রাইজ যার প্রোপাইটার নুরুল ইসলামের গুদামে ইউরিয়া ৬ হাজার ২০০ বস্তা, টিএসপি ৪ হাজার ৭০০ বস্তা, ডিএপি ৩ হাজার ২০০ বস্তা, এমওপি ৩ হাজার ৩০০ বস্তা, মজুদ ছিল। বামন্দী বাজারের মেসার্স জামান ট্রেডার্স যার প্রোপাইটার আল আমিন (দায়ীত্বপ্রাপ্ত )গুদামে ইউরিয়া ৮ হাজার বস্তা, টিএসপি ৭ হাজার ৪০০ বস্তা, ডিএপি ২ হাজার ৫০০ বস্তা, এমওপি ৫ হাজার বস্তা মজুদ ছিল।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, সারের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে অসাধু কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুর রউফ এসব সার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে সারের মজুদকম দেখিয়ে উল্লেখিত মজুদকৃত সার কৃষকদের মাঝে প্রতি কেজি ২৭ টাকা দরে বিক্রি করাচ্ছেন। কৃষকদের কাছ থেকে বর্ধিত মূল্যে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেশি দরে ১১ এপ্রিল ২০২৩ থেকেই বিক্রি করে আসছে। এই সার বিক্রির সময় রেজিস্ট্রারে কৃষকদের নামের তালিকা নাম মোবাইল গ্রাম সব সংরক্ষন করার কথা। কিন্তু সার বিক্রিতে কোনো রকম রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়নি। কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রশিদ চাইলেও রশিদ দিচ্ছেনা। বরং কৃষকদের সাথে অসাদাচারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্বপ্র্প্তা ডিলারদের নিজ নিজ ইউনিয়নের গুদাম ঘর থেকে কৃষকদের মাঝে সার বিক্রির বিধান থাকলেও উপজেলা শহর ও বামন্দী থেকে তারা সার বিতরন করে থাকেন। এতে কৃষকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগীতার কারনে তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর জেলা প্রশাসক উপপরিচালক (ডিডি) কৃষি বিভাগকে তদন্ত করার জন্য চিঠি দেন। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর আবারো আবেদন করেন কৃষক লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম। সঠিক তদন্ত না হওয়ার আশংকায় তিনি জেলা প্রশাসনের কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্তের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, আমি গাংনীতে প্রায় দুই বছর চাকুরী করছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা ভিত্তিহীন। তিনি সার ডিলারদের সরাসরি পক্ষ নিয়ে বলেন, এপ্রিল মাসের যে সার ডিলারদের কাছে মজুদ ছিল সেগুলো তারা নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রার খাতা মেইনটেন করেই বিক্রি করেছেন। সারের ডিলাররা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে না বিক্রি করে উপজেলা পর্যায়ে বা বামন্দীতে সার বিক্রি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ২০০৯ সালের আগে ছিল। আমাদের রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে সারের ডিলার রয়েছে। এখন তারা প্রতিটি ইউনিয়নে যেখানে সার বিক্রি করার কথা সেখানেই সার বিক্রি করেন। আবার উপজেলা পর্যায়ে বা বামন্দীর মত স্থানে তাদের একাধিক দোকান রয়েছে।