গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। কয়লার বদলে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ নষ্ট হচ্ছে রাস্তা ঘাট। দেশে আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আবাদি জমি থেকে মাটি ব্যবসায়ীরা ট্রলি করে রাস্তার উপর দিয়ে হাজার হাজার মাটির গাড়ী নিয়ে ভাটায় মাটি বিক্রয় করছে এর ফলে রাস্তার উপর মাটি পড়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। কোন ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় অভিযোগে গত ১৯ জানুয়ারি গাংনী উপজেলার ৫৮টি ভাটার মধ্যে মাত্র ১০টি ইটভাটাকে ৬৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর।
স্থানীয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বাকী ৪৮টি ইটভাটা থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করার করণে অন্যন্যভাটায় জরিমানা আদায় বন্ধ রয়েছে। ১০টি ইটভাটায় ৬৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করার কারণে ভাটা মালিকরা ইটের দাম গাড়ী প্রতি ২হাজার টাকা বাড়িয়েছে।
পরিবেশে সবুজের পরিমান বাড়াতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে বাংলাদেশকে কিন্ত এ যেন স্রোতের মুখে বালির বাঁধ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাংনী উপজেলায় মোট ৫৮ টি ইটভাটা রয়েছে বেশীরভাগ ইটভাটায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বৈধতার কোন কাগজ পত্র নাই। এর মধ্যে ২৩ টি ইটভাটার সাময়িক সনদ পত্র থাকলেও বাকি ৩৫টি ইটভাটার কোন অনুমোদন নেই।
এগুলোর মধ্যে গাংনী পৌরসভার মধ্যে ৩ টি ও অন্যান্য অঞ্চলে ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। প্রভাবশালী রাজনীতিকরা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ক্ষমতার জোরে ইটভাটা তৈরী করছে। ভাটার চিমনি তৈরীতে সরকারী নির্দেশনা থাকলেও ইটভাটা মালিকরা ১২০ফুটের পরির্বতে কোন কোন জায়গায় ৮৫ ফুট, ৬০ ফুট ৪০ ফুট চিমনি ব্যবহার করছে।
গাংনীতে সরকারী নির্দেশ ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবেনা। ১২০ ফুট উচুঁ চিমনি ব্যবহার করতে হবে। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হকসহ গাংনী পৌর এলাকার মালসাদহ গ্রামের আবাদি সবজি জমিতে ইটভাটা নির্মান করে অবৈধ ভাবে কয়লার বদলে পোড়াচ্ছে কাঠ।
এছাড়াও গাংনী উপজেলার কসবা ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বে আবাদি জমিতে নতুন করে গড়ে তুলেছে ইটভাটা। ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
গাংনী থানা হয়ে ধানখোলা রোডে রাস্তার পার্শ্বে সরকারী রাস্তা দখল করে গড়ে তুলেছে ইটভাটা।
এছাড়ও প্রতিদিন রাস্তার উপর দিয়ে মাটির গাড়ী চলার করণে রাস্তার উপর মাটি পড়ে রাস্তা নষ্ট হয়েছে ফলে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পরে দুর্ঘটনা। আর এ সকল ইটভাটায় প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার মন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব কাঠের উৎস সংরক্ষিত বা গৃহস্থালীর বাগান।
ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে,তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে গাছ পালা, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরী করে অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করলেও অজ্ঞাত কারণে অভিযান থমকে গেছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ,যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরী হওয়ায় আবাদী জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরী করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে ইট তৈরী করে। এতে ফসলী জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়।
শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও আবাদি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কোন ইটভাটায় অনুমতিপত্রের শর্তানুযায়ী এক টুকরা কয়লা ব্যবহার করা হয় না।ব্যবহার করা হয় কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।
সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেনা। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরী করছে।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, সরকারী ভাবে কাঠ পোড়ানো নিষেধ রয়েছে তার পরেও আমরা কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করছি। পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
রাস্তার উপর মাটি পড়ে রাস্তা নষ্ট হওয়ার বিষয়ে ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু বলেন, আমাকে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি চিঠি দিয়েছে আমি সকল ভাটা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছি।রাস্তা পরিশস্কার না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়াও বিভিন্ন মিলে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।বাংলাদেশে সবজায়গায় অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চলছে। সরকার ২৫সালের মধ্যে সকলঅবৈধভাটা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আবাদি জমিতে ও স্কুলের পার্শে ভাটা নির্মানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজে ভাটপাড়া স্কুলে পার্শ্বে ভাটা নির্মানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছিলাম সেখানে ভাটা নির্মাণ করেছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রিয়াজুল আলম জানান, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াঅতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। অনতি বিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরী।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, কোন ব্যাক্তি যদি আবাদি ফসলী জমিতে বা স্কুলের পার্শে ইটভাটা নির্মান করে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: আতাউর রহমানের সাথে মোবাইল যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।
ইটভাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে রয়েছি পরে কথা বলা হবে।
এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন যে সকল উটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।সেই সকল ভাটায় আমাদের কর্মকর্তা মনিটরীং করছে।
এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। বিয়ষটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।