মেহেরপুর জেলাতে আবহাওয়া এখন না শীত না উষ্ণ। দিনে রোদে তাপের ঝলক। রাতের হাওয়ায় হাল্কা শিরশিরানি। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনীর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে। বিষয়টি স্বীকার করে চিকিৎসকরা চিকিৎসা গ্রহনের পাশাপাশি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। গত রোববার নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ জন, শিশু ১২ জন এবং ২৫ জন নারী। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনো ঠাণ্ডা কখনো গরম। দিনে গরমের কারণে সমস্যা আর রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর কারণে ঠাণ্ডা লেগে শরীরে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থতা ও জ্বরের স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাইরের বিভিন্ন খাবার ও পানি খাওয়ায় ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বয়ষ্কদের সংখ্যা বেশি।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরে রোগীদের দীর্ঘ সারি। টিকিট রেজিস্টারে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে দু’হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ওয়ার্ডে ৭৫ জন ভর্তি রয়েছে। পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝে ও সিঁড়িতেও রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। শিশুদের কান্নায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, স্বর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডাইরিয়া রোগে আক্রান্ত। আর শিশুরা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত।
জোড়পুকুরয়িা গ্রামের কাজল জানান, তিনি তার ছেলে হামিম(২) কে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন তিন দিন। ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রথমে হালকা জ্বর হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। পরে রোগির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে ধরে পড়ে হামাম নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। করমদি গ্রামের গৃহবধু লাবনী তার মেয়ে ছয়মাস বয়সি আপিয়াকে নিয়ে ভর্তি আছেন ৭ দিন। আরো ৫ দিন থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এছাড়াও রোগি আরাফাত জানান, তিনি জ্বর ও ডাইরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে দু’দিন ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক এম কে রেজা জানান, বর্তমান আবহাওয়ার কারণে জ্বর স্বর্দি কাশি আর ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগিরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেকেই আউটডোরে পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর যে রোগির অবস্থা একটু সংকটাপন্ন তাকে ভর্তি রাখা হচ্ছে। রোগির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ওষুধ সংকট ন্ইে বেেলও জানান এই চিকিৎসক।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্র্তা রাশেদুল হাসান শাওন জানান, আবহাওয়ার পালা বদলে বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তাদের শরীরে পরিবর্তন বিশেষ ছাপ ফেলে। এক আবহাওয়া থেকে অন্য আবহাওয়ায় অভ্যাস হতে আমাদের সামান্য সময় লাগে। যতক্ষণ না আমাদের শরীর সেই পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে না ততক্ষণ শরীরে তার নানা প্রভাব পড়ে। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না। সেক্ষেত্রে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।