মেহেরপুরে মাটির সংস্পর্শ ছাড়াই কোকো ডাস্ট পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে শাক সবজি ফল ফুলসহ বিভিন্ন ফসলে চারা। প্লাস্টিক ট্রের মধ্যে কোকোডাষ্ট ব্যবহার করে জৈবিক ওআধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের জিয়াউর রহমান। আর্থিক সহায়তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এপদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পুরনে ভুমিকা রাখতে চান এই কৃষি উদ্যোক্তা।
মেহেরপুর জেলায় প্রথমবারের মত আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার ছাড়াই প্লাষ্টিকের ট্রের মধ্যে কোকোডাষ্ট ও জৈবসার ব্যবহার করে সবজিসহ ফল ফুলের বীজ বপন করে চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। সারি সারি প্লাষ্টিকের ট্রে সাজানো, সেই ট্রেতে সারিবদ্ধভাবে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজি ও বিভিন্ন গাছ গাছালির চারা। তবে অবাক ব্যাপার হচ্ছে এসব চারার সাথে মাটির কোন সম্পৃক্ততা নেই। নারিকেলের ছোবড়ার টুকরার(কোকো ডাস্ট) এর মধ্যে বীজ বপন করে গঁজানো হয়েছে সুস্থ্য সবল রোগমুক্ত চারা গাছ। পদ্ধিতিটির নাম হচ্ছে ‘কোকো ডাস্ট’। পদ্ধতিটি এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুস্থ্য ও সবল চারা পাওয়ায় কৃষকরা কোকো ডাস্ট পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। মাটির সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় রোগ বালাই এর আক্রমণ নেই। রয়েছে জাতেরও নিশ্চয়তা। এপদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান প্রতিবছর আয় করছেন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা।
জিয়াউর রহমান জানান, লেখা পড়া শেষে রাজশাহীর আকাফুজি এগ্রো টেকনালজি নামের একটি কৃষি খামারে চাকুরি করতেন। আট বছর চাকরি শেষে বাড়ি ফিরে শুরু করেন নার্সারির ব্যবসা। কয়েক বছরেই লাভের মুখ দেখেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারা উৎপাদন করে বিভিন্ন কৃষকদের মাঝে স্বল্প মুল্যে বিক্রি করেন। এতে লাভবান হলে এক বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। পুরো জমিতেই বীজ তলা তৈরী করেন। খুলনা থেকে কোকো ডাস্ট সংগ্রহ করে তাতে জৈব সার (কেঁচো কম্পোষ্ট) মিশ্রণ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও গাছের চারা উৎপাদন করে এখন মোটা টাকা আয় করছেন। ১০ হাজার প্লাস্টিকের ট্রে সংগ্রহ করেন। এতে এক সাথে এক লক্ষ চারা উৎপাদন করা হয়। ট্রেতে বীজ বপন শেষে ঢেকে দেয়া হয় নেট দিয়ে। ফলে কোন প্রকার কীটপতঙ্গ চারা গাছকে আক্রমণ করতে পারেনা। চারাগুলি বেড়ে ওঠে সুস্থ ও সবল হয়ে। রোগ বালাই মুক্ত চারা পেয়ে কৃষকরা ভাল ফসল ঘরে তুলছেন। কর্ম সংস্থান হচ্ছে তার নার্সারি থেকে এলাকার অনেক যুবকের।
জিয়াউর রহমান আরও জানান, ক্যাপসিক্যাম,স্ট্রবেরি,হাইব্রীডমরিচ,লাউ, কুমড়া,তরমুজ,বাঁধাকপি,ফুলকপিসহ বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় হচ্ছে তার। তিনি জানান, একটি সুস্থ্য সবল চারা ভাল ফসল ও ফলনের নিশ্চয়তা দেয় কৃষকদের। তাই কৃষি প্রধান দেশে কৃষি নির্ভরশীল মেহেরপুর জেলায় নিজেকে আত্ন নিয়োগ করে আত্নতৃপ্তি পাচ্ছেন বলেও জানান এই উদ্যোক্তা।
কৃষক রুবেল হোসেন ও হাবিব জানান, গেল বছর কোকো ডাস্ট পদ্ধতিতে উৎপাদিত বাঁধাকপির চারা নিয়ে জমিতে ভাল ফলন পেয়েছেন। তাই এবারও এসেছেন চারা সংগ্রহ করতে। সুস্থ্য সবল ও বালাই মুক্ত চারা হলে ফসল ভাল হয় বলেও জানান এই কৃষক।
স্কুল ছাত্র শাওন ও আব্দুল আলিম জানান, লেখা পাড়ার পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের নার্সারিতে বিভিন্ন প্রকার চারা উৎপাদন হচ্ছে। এখান থেকে হাতে কলমে প্রশ্ক্ষিণ নিয়ে আমরাও কৃষিতে অবদান রেখে আত্ননির্ভশীল হতে চাই।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লাভলী খাতুন জানান, কোকো ডাস্ট পদ্ধতিতে জিয়াউর রহমানের চারা উৎপাদনের বিষয়টি আমরা জানি। কোকো ডাস্ট পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই যে কোন বীজ থেকে চারা গজায় খুব সহজেই। জিয়াউর রহমানের বীজতলায় এক সাথে এক লক্ষ চারা উৎপাদন হচ্ছে। আমরা তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।