মেহেরপুরের গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামে চুরির অপবাদে গ্রাম্য সালিশে বিচার করে জুবায়ের হোসেন (৪০) নামের একজনকে বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে এবং এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার জুবায়ের হোসেন ষোলটাকা গ্রামের আইয়ুব হোসেনের ছেলে। আহত জুবায়ের হোসেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাদী হয়ে ৮জনকে নামীয় ও আরো ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে গাংনী থানায় মামলা করে। গাংনী থানা পুলিশ গ্রাম্য মাতব্বর শরিয়তসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অন্যান্য দুজন আসামী হচ্ছেন- শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বিদ্যুত। তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আহত জুবায়ের হোসেন জানান, তিনি সোমবার রাতে বানিয়াপুকুর গ্রামের পাশে নিজ পুকুর পাড়ে মাছ পাহারা করছিলেন। এসময় গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আলাল, আচেল উদ্দীনের ছেলে রবিউল ও মোজাফের ছেলে আজাম্মেল ওই জুবায়ের হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে জুবায়ের হোসেনের দুই পা হাত ও পিঠে জখম হয়। পরে তারা জুবায়েরকে প্রাইমারী স্কুলের একটি কক্ষে আটক রাখে।
মঙ্গলবার সকালে হেমায়েতপুর ক্যাম্প পুলিশের উপস্থিাতিতে সালিশ বৈঠকের ডাক দেয়া হয়। সালিশে জুবায়েরকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩০০ টাকা মুল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেয়া হয়। সেই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মারাত্মক আহত জুবায়েরকে তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
বানিয়াপুকুর গ্রামের প্রধান মাতব্বর শরিয়ত জানান, গ্রামের লোকজন জুবায়েরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিচার সালিশ বসিয়েছে তাই সামাজিক ভাবে তার বিচার করা হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে আদায়কৃত টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি। সালিশীতে একলাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
ষোলটাকা গ্রামের সাবেক মেম্বর ময়নাল হক জানান, তিনিসহ ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জুবায়েরকে নিতে এসেছিলাম কিন্তু বানিয়াপুকুর গ্রামের সমাজপতিরা জুবায়েরকে না দিয়ে জরিমানা করেছে এবং মুচলেকা লিখে নেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার পরও কিভাবে সালিশের নামে মারধর করে তা বোধগম্য নয়। সমাজপতিরা যে মোটা টাকা জরিমানা করেছে তা সম্পুর্ণ অবৈধ।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জুবায়ের হোসেনের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। আসামীদেরকে বুধবার দুপুরে মেহেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়। অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।