টাকা চুরির অপবাদে নাসিম (৮) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত ও অমানবিক নি’র্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নি’র্যাতন শেষে পালিয়ে যেতে না পারে সে কারনে তাকে একটি ঘরে আবদ্ধ করে ভয়ভীতি দেখিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।
টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদে তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নি’র্যাতন করা হয়েছে বলে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নাসিমের পরিবার। আহত শিশু নাসিম গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে।
সে কয়েকমাস যাবত গাংনী পৌর এলাকার মালশাদাহ পুর্বপাড়া এতিমখানা সিদ্দিকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে লেখা পড়া করছে।
আহত শিশু নাসিমকে তার পরিবার গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার বিকেলে গাংনী উপজেলার মালশাদাহ পুর্বপাড়া এতিমখানা সিদ্দিকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায়। তবে মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক শিশু নি’র্যাতনের ঘচনাটি জানাজানি হলে শিক্ষকের শাস্তি দাবী করছেন সচেতন মহল।
জানাগেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মালশাদাহ পুর্বপাড়া এতিমখানা সিদ্দিকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় জোড়পুকুরিয়া গ্রামের ইয়াউর রহমান তার শিশু পত্র নাসিমকে অরবি পড়তে ভর্তি করেন। কয়েক মাস আগে তাকে ভর্তি করা হয়।
গত শুক্রবার বিকেলে মাদ্রাসার আর এক শিক্ষার্থী নাবিব এর একশ টাকা হারিয়ে যায়। নাবিবের টাকা অন্যত্র খঁজে না পাওয়া গেলে সন্দেহ হয় নাসিমকে।
তাকে ধরে মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম অমানবিক ভাবে পিটিয়ে আহত করে। বেধড়ক পেটানোর এক পর্যায়ে নাসিম টাকা চুরির বিষয়টি স্বিকার করে। কিন্তু নাসিমের বাক্স ও জিনিসপত্র খুঁজে কোন টাকা পাওয়া যায়নি বলে জানায় মাদ্রাসায় পড়ুয়া অন্য শিক্ষার্থীরা।
মারধর শেষে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে নাসিমকে মাদ্রাসার একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে এবং মারধরের কথা কাউকে বল্লে মেরে ফেলার হুমকি দেয় মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। এক পর্যায়ে শিশু নাসিম বুদ্ধি খাটিয়ে গত শুক্রবার সন্ধায় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। সমস্ত ঘটনা তার পিতা মাতাকে খুলে বলে। নাসিমের শারীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখে আৎকে ওঠে তার পরিবার। তাকে ঐদিন শুক্রবার সকালে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হাত, পা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘতের চিহ্ন দেখে আতকে ওঠে হাসপাতালের অন্যান্যরাও।
শিশু নাসিমকে অমানবিক নি’র্যাতনকারি মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীরের বিচার দাবী করেন তার পিতা মাতা। নাসিমের মা নাছিয়া খাতুন জানান, একটি আট বছরের শিশুকে অমানবিক ভাবে যে পিটিয়ে আহত করছে এবং তাকে একটি ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছে সেই পাষন্ডের উপযুক্ত বিচার চাই। বিচার না হলে তার কাছে কোন শিশু শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়।
পিতা জিয়াউর রহমান জানান, মাদ্রাসা শিক্ষার নামে যে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নাসিমকে মারধর করিনি। তাকে মাদ্রাসার অন্য ছাত্ররাই মেরেছে। কি কারনে মেরেছ জানতে চাইলে তিনি বলেন,মাঝে মধ্যেই অন্যদের টাকা চুরি হয়ের যায় তাই তাকে মেরেছে কিন্তু তার ব্যাগ -ব্যাগেজ তল্লাশি করে কোন টাকা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জাানিয়েছেন।
মাদ্রাসা সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি এ ঘটনার কিছুই জানিনা। সকালে বিষয়টি শুনলাম। তবে নাসিমের পিতা নাসিমকে আমার মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর পর থেকে কোন টাকা পয়সা দেয়না। সে কারনে হয়তবা টাকা নিতে পারে। তবে নাসিমকে মারধরের বিষয়টি শুনে তিনি মর্মাহত হয়েছেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে আরএমও ডা: বুধা দিপ্ত দাস বলেন, শিশু নাসিমের শরীরে অনেক আঘাত পেয়েছে। মানসিক ভাবে নাসিম আতংকে রয়েছে। ভয়ভীতি দেখানোর কারনে মাঝে মধ্যে সে প্রলাপ বকছে।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
গাংনী উপজেলা নিবাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক। থানায় অবহিত করা হলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।
মেপ্র/ইএম