ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তুলে নিয়ে জোর পূর্বক ত্রাণের তালিকায় স্বাক্ষর করিয়ে নিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। একই সঙ্গে ভিজিপির চাল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্ষমতার দাম্ভিকতার এ ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা কাজিপুর ইউনিয়নে।
ইউনিয়ণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপন ধানখোলা ইউপির আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কাজিপুর হালসানা পাড়ার বাসিন্দা।
কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহ জানান, কাজিপুর ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপন ও বেতবাড়িয়া গ্রামের আলাইহীম সহ তাদের সহযোগীরা আমাকে কাজিপুর গোলাম বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে ত্রানের ১২শ জনের তালিকায় জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। সার্বিক ঘটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসকে জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ শেষ বয়সে আমাকে নিয়ে যা করলো আল্লাহই তার বিচার করবে।
ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি ও কাজিপুর ইউপি সদস্য মো: খবির উদ্দীন জানান, দলীয় ভাগ নেওয়ার নামে চেয়ারম্যানকে জিম্মি করে ১২শ’ জনের তালিকায় জোর করে লিখে নেয় ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপন তার লোকজন। তিনি আরো বলেন, বেতবাড়িয়া গ্রামের কথিত আওয়ামীলীগ কর্মী আলাইহীমের নেতৃত্বে একই গ্রামের হকাজ্জেলের ছেলে রাজু ভিজিডির ২ বস্তা চাল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে প্রশাসনিক চাপের মুখে চাল ফেরত দিলে আসলে তাকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকিয়ে রাখা হয়।
কাজিপুর ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান জানান, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপন তার লোকজন নিয়ে এসে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১২শ’ জনের তালিকায় জোর করে লিখে নিয়েছে। এরপর তার সমর্থকরা জোর করে ভিজিডির ২ বস্তা চাল নিয়ে যায়। এছাড়া সে কাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোন নেতাকর্মীকে না নিয়ে একাই সব কাজ করে। তার ক্ষমতার দাপটে অসহায় হয়ে গেছে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার কারনে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে সে।
কাজিপুর ইউপি সচিব আব্দুর রহমান জানান, করোনা সংক্রামনের কারনে সরকার কাজিপুর ইউনিয়নে ৪ হাজার ১শ’ ৪৮ জন কর্মহীন ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে ১৫ কেজি করে ত্রানের চাল দেবে। এই চাল প্রকৃত কর্মহীন ও অসচ্ছল ব্যক্তিরা যাতে পায় এজন্য সকলে বসে তালিকা প্রস্তুত করা কথা বলা হলে তারা অসৌজন্য মুলক আচরন করে চাল ছিনতাই ও তালিকায় জোর করে স্বাক্ষর করে নেয়। ইউপি চেয়ারম্যান বৃদ্ধ মানুষ তিনি বিএনপি দলীয় হওয়ার কারনে তাকে বারবার অপদস্থ করা হয়।
কাজিপুর ইউপি আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আবু নাতেক জানান, কাজিপুর ইউপি আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপন কাজিপুর গোলাম বাজার থেকে চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসে এরপর সচিবের রুমে তালা লাগানোর পরপরই চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তালিকায় জোর করে স্বাক্ষর করে নেয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে রক্ষিত ভিজিডির ২ বস্তা চাল জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে তার ক্যাডারদের হাতে তুলে দেয় আব্দুর রউফ স্বপন। তিনি আরো বলেন,আব্দুর রউফ স্বপনের নানা অপকর্মের কারনে আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি সিনিয়র নেতাদের অবগত করলে তারা ক্ষোভ করে করেন। দ্রত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
কাজিপুর ইউপি আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুর রউফ স্বপনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য (মঙ্গলবার বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত) একাধিকবার কল দিলে তিনি বন্ধ পাওয়া যায়।
গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান জানান,ঘটনাটি জানতে পেরে পীরতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই বাবুলকে কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন,বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব অবগত করলে সহকারী কমিশনার ভুমিকে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে গাংনী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।