মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত দুই মাস আগে কেনা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ৬ হাজার টাকা করে হলেও ভাউচার দেখানো হয়েছে কোনটিতে ১২ হাজার আবার কোনটিতে ১৫ হাজার টাকা।
হিসাব মত ১৪০টি বিদ্যালয়ের মেশিন গুলোর দামহতো ৯ লাখ টাকা সেখানে অতিরিক্ত ১২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
আর এই অতিরিক্ত টাকাটা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পটেস্থ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুটি কয়েক শিক্ষক নেতা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বায়োমেট্রিক ডিভাইস কোম্পানীর প্রতিনিধি এর সাথে জড়িত আছেন।
সরকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক চলতি বছর প্রতিটি বিদ্যালয়ে ¯িøপ বাবদ ৫০-৮০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট সরকারি টাকা লুটপাটের পায়তারায় ব্যাস্ত।
এদিকে দুইমাস আগে মেশিন গুলো স্থাপন করা হলেও এখন পর্যন্ত সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি মেশিনে আরও চার হাজর টাকা করে খরচ করলে মেশিনগুলো চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
গাংনীর বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বায়োমেট্রিক মেশিন গুলো অচল হয়ে পড়ে আছে।
এ বিষয়ে ডিভাইস কোম্পানি জেড কেটি’র বিক্রয় প্রতিনিধি ওয়াহিদুজ্জামান সোহাগ বলেন, মূল ডিভাইসের দাম ৬৫০০ টাকা। ভাউচারে ১২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে অন্যান্য সেটআপ খরচ সহ।
এ বিষয়ে বাঁশবাড়িয়া মাঠপাড়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক মিন্টু
জানান, আমরা বায়োমেট্রিক মেশিন সম্পর্কে খুব একটা বুঝিনা। আমাদের যেভাবে বলা হয়েছে আমরা সেভাবে কাজ করেছি। মেশিন কেনার সাথে যে দুর্নীতি হয়েছে সেটা সম্পর্কেও আমি তেমন কিছু জানিনা।
বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরুন নাহার বলেন, শিক্ষক নেতারা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার যে ভাবে বলেছে আমরা সেভাবে কাজ করেছি। মেশিন এখনো চালু হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এই ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।
চৌগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুর রকিব জানান, বায়োমেট্রিক হাজিরার জন্য যে মেশিন কেনা হয়েছে তাতে সে কাজ হবে না। এটি চালু করতে আরও কিছু যন্ত্রপাতি যোগ করতে হবে। অকেজো মেশিন কেনা হয়েছে কেনো এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শিক্ষক নেতাদের আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, বায়োমেট্রিক মেশিন কেনার বিষয়ে প্রতিটি স্কুল জানে। অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানিানা। অকেজো মেশিনগুলো কেনো কেনা হলো এবং এটি কিভাবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়টি স্কুলগুলো দেখবে। মেশিন কেনার দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে রহমান বলেন, আমি এ জেলায় যোগদান করার আগে মেশিন গুলো কেনা হয়েছে, সেগুলো এখনো চালু হয়নি। এই মেশিনগুলো ডিজিটাল ভাবে চালু করতে আরও কিছু যন্ত্র যোগ করতে হবে। সে যন্ত্রগুলো কিনতে আরও ৪ হাজার টাকা খরচ হবে।
দুর্নীতি হয়েছে স্বীকার করে নিয়ে ফজলে রহমান বলেন, তবে এই অতিরিক্ত টাকা গুলো দিতে হবে যারা মেশিন কেনার দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের। দুর্ণীতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন লিখিত ভাবে অভিযোগ আসেনি। তারপরও আমি বিষয়টি শুনেছি। যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও মেশিন গুলো চালু করতে যা খরচ হবে সে খরচ দুর্নীতির টাকা ফেরত দিয়ে পুশিয়ে দিতে হবে।
:মতুর্জা ফারুক রুপক