নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগে মেহেরপুরের গাংনীর কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টার পর থেকে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। এ ঘটনায় নিরব থাকায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে তারা। এদিকে শুক্রবার সকালে আবারো নির্মাান কাজ শুরু করার চেষ্টা করলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসি।
মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত কুমার পাল বলেন,২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যায়ে কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যাদেশ পায় কুষ্টিয়ার আনোয়ার আলী নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেনের ছেলে তনু। নিম্নমানের বালি দিয়ে ঢালাই করা হয়েছে এমন সংবাদ পাওয়ার পর নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবা খাতুন দিপালি জানান,নিম্ন মানের বালি ও খোয়া ব্যবহার করার কারনে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এলাকাবাসি নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন পরে জানানো হবে। কাজ দেখভাল করার জন্য কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: মজিরুল ইসলাম বলেন,নিম্ন মানের বালি ও খোয়া ব্যবহার করে কঠিন ভুল করেছে। বিষয়টি নিয়ে ম্যানিজিং কমিটি শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে বসে আলোচনা করার পর পরবর্তী করনীয় ঠিক করা হবে।
কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: খবির উদ্দীন জানান,ঢালাইকাজ করার সময় কয়েক শিক্ষক সহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকরা সরে গেলে নিম্ন মানের বালি ও খোয়া ব্যবহার শুরু করে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে এলাকবাসি কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম উপস্থিত ছিলেন না।
স্থানীয়দের দাবি, নির্মান কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঢালাই চলাকালিন সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। একারনে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবাদ করলেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করবে এই ভয়ে সকলেই মুখ বুঝে অনিয়ম সহ্য করে। ঠিকাদাররা যখন অনিয়ম করে সেই অনিয়নের প্রতিবাদ করলেই চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। এটা ঠিকাদারদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আলিমের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল গনী জানান, বাইরে থেকে খারাপ খোয়া এনেছে। এছাড়া মোটা বালি রেখে নিম্নমানের বালি দিয়ে ঢালাই করেছে। এজন্য গ্রামের লোকজন ও শিক্ষকরা কাজ বন্ধ করে দেয়।
ঠিকাদার তনু করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে নির্মান কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার স্বরন জানান,শ্রমিকরা ভুল করে কিছু বালি ঢালাইয়ে ব্যবহার করেছে এটা ঠিক কিন্তু নির্মান কাজ শতভাগ ভালো হচ্ছে। নিম্নমানের বালি শ্রমিক না ঠিকাদার এনেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঠিকাদার এনেছে।
নিম্নমানের বালি কেন এনেছে জানতে চাইলে বলে এগুলো দিয়ে পলেস্তারা করা হবে। মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাহেদুল করীমের সরকারী ও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রাহেদ হোসেন বলেন,নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঢালাই কাজ করে অন্যায় করেছে খোঁজ খবর নিয়ে ঠিকাদার ও দায়িত্ব প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার মোবাইল ফোন রিসিভি না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসন ড.মোহাম্মদ মুনছুর আলম খান বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেখভাল করার কথা তারা যদি অবহেলা করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ভাবেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা যাবেনা। সরকারী বিধি মোতাবেক কাজ করতে হবে। কোন অজুহাত চলবেনা।