বাঙালি সংস্কৃতিতে শীত ঋতু বিশেষ ভূমিকা জুড়ে আছে। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাসে তৈরি হয় নানান জাতের পিঠা। এই পিঠাই চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সাথে ছিল হারিয়ে যাওয়া কারুপণ্য।
আবহামান কাল ধরে গ্রামবাংলার মানুষের ঐতিহ্যেও এই নানাজাতের ঐতিহ্যবাহী পিঠা আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে। যান্ত্রিক জীবনে নতুন প্রজন্ম জানে না বাঙালিয়ানা অনেক পিঠার নাম। দিনভর নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মেলা প্রাঙ্গণ। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে মেলে ধরতে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার দিনব্যাপি আয়োজন করা হয়েছে পিঠা উৎসব ও কারুপণ্য মেলা। গতকাল আজ সোমবার গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব-২০২৫। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তরুণ উদ্দ্যেক্তা, প্রতিষ্ঠান এই পিঠা উৎসবের অংশ নেন।
গ্রামীণ এই ঐতিহ্যকে আরও সুন্দর করে তুলতে আয়োজনের সঙ্গে ছিল হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য লোকজ কারুপণ্য। কারুপণ্য আর পিঠা নিয়ে স্টল বসেছিল ২০টি। দিনব্যাপি মেলাতে ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, তারা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, কলা পিঠা, মালপোয়া, দুধ চিতই পিঠা, পুলি পিঠা (ভাপা), জামাই পিঠা সহ আরও হরেক রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছিল উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি এই উৎসবের স্টলগুলোতে গ্রামীণ নকশী কাঁথার প্রদর্শন ছিল দর্শনার্থীদের কাছে আলাদা মাত্রা। এছাড়াও হারিয়ে যাওয়া হারিকেন, হুকু, হাঁড়ি-পাতিল রাখার সিঁকি, দাঁড়িপাল্লা, খেয়া জাল, মাতাল, বিড়িতে আগুন দেওয়ার পুয়ালের তৈরী বুন্দা, পুরানো টর্চলাইট, কুপি বাতি, হারিকেন, টেপরেকোর্ডার, খড়ম, ঢেঁকি, মাছ ধরার বিত্তি, দাঁড়িডাল্লা, বাটখারাসহ নানা রকম জীবন থেকে হারিয়ে পণ্যের পসরা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া স্টলগুলোতে শোভা পাচ্ছিল, গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা ধরণের পোশাক, বাঁশ বেতের তৈরী কুলা ডালা, শরপস, সের ধামা ছাড়াও ছিল দেশীয় ছাগল, ভোকরা, গিনিপিক, খোরগোস, কবুতরসহ নানা জাতের প্রাণী। গ্রাম-বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লোকজ খাবার ধরে রাখা ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এমন উৎসবের আয়োজন জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা। তিনি আরও বলেন, পুরানো ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জানান দেয়াটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম আমাদেও পুরানো ঐতিহ্য সমন্ধে একটা ধারণা পাবে। এর আগে শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে ও ফিতা কেটে দিনব্যাপি এই পিঠা ও কারুপণ্যে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা।
এসময় গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক, কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান মুহা. আলম হুসাইন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মনসুর রহমান, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার আসাদুজ্জামান আসাদ, গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার নাসিমা খাতুন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাসুম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেরপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তারুণ্যের উৎসবে ২০২৫ উৎযাপন উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি উপজেলা পরিষদ চত্তর থেকে শুরু হয়ে হাসপাতাল চত্তর ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
উৎসবে অংশ নেয়া ডাক্তার তাসনােভা মুর্শেদ জানান,প্রতি শীত মৌসুমে এ ধরণের উৎসব করলে,পুরানো ঐতিহ্য আবার নতুন করে চাঙা দেবে। ফলে নতুন প্রজন্ম নতুন নতুন ধারণা পাবে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নানা প্রকার পিঠার পসরা সাজিয়ে রাখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি এউৎসবে নকশী কাঁথা স্টলের মাধ্যমে প্রদর্শন ছিল আয়ােজনের আলাদা মাত্রা। এছাড়াও হারিয়ে যেতে বসা হারিকেন, হুকু, বোন্দা, হাঁড়ি-পাতিল রাখার সিঁকিসহ নানা রকম পণ্যের পসরা প্রদর্শন করা হয়। গাংনী উপজেলা প্রশাসন এ উৎসবের আয়োজন করে।
উৎসবে অংশ নেয়া ডাক্তার তাসনােভা মুর্শেদ জানান,প্রতি শীত মৌসুমে এ ধরণের উৎসব করলে,পুরোনো ঐতিহ্য আবার নতুন করে চাঙা দেবে। ফলে নতুন প্রজন্ম নতুন নতুন ধারণা পাবে। পিঠা ও কারুপণ্য প্রদর্শিত স্টল পরিদর্শনে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা তার প্রতিক্রিয়ায় জানান,পুরােনাে ঐতিহ্য এভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জানান দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ থেকে নতুন প্রজন্ম অনেকটা শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেলো।