মেহেরপুরের গাংনীতে প্রাক্তন সৈনিক সংস্থার কার্যালয়ের জমির মালিকানা নিয়ে চল রশ্মিটানাটানি। জমির মালিকা দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক সেনা সদস্য কাজিম উদ্দীনের বড় ছেলে মোঃ সেলিম রেজা। শনিবার দুপুরে বাঁশবাড়িয়ার সন্নিকটে স্থাপিত সৈনিক সংস্থার পুরাতন কার্যালয়ের সমনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ সেলিম রেজা।
লিখিত বক্তব্যে জানান, গাংনীর বাশবাড়িয়াস্থ পৌর এলাকার পলাশীপাড়া সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের পুর্বপার্শ্বে প্রাক্তন সৈনিক সংস্থা নামে একটি সংগঠন ছিল। যার সভাপতি ছিলেন আমার বাবা সাবেক সেনা সদস্য মোঃ কাজিম উদ্দীন। এ সংস্থার শুরুতে সদস্যদের মাসিক ৫০ টাকা চাঁদা সঞ্চয় করা হতো। ২০০১ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ৫০/৬০ হাজার টাকা সঞ্চয় হয়। এই ৫০ হাজার টাকার সাথে আমার পিতা আরও ৫০ হাজার টাকা ধার হিসেবে দিয়ে এই জমিটি ক্রয় করেন। যা সংস্থার নামে রেজিস্ট্রি হয়।
পরবর্তীতে ২০০৩/২০০৪ সালের দিকে সংস্থার কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়ে। সদস্যদের অনেকে সংগঠন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। ধারের টাকা ফেরত পেতে আমার পিতা বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার এই জমি বিক্রি করে আমার বাবার ধারের টাকা ও সদস্যদের সঞ্চয় ফেরত এবং সংস্থার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। জমি বিক্রি করে একটি ভাড়া বাসায় সংস্থার কার্যক্রম চালু রাখার কথা ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক সদস্য তাদের জমানো সঞ্চয় ফেরত চাইতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার পিতার কাছে জমিটি বিক্রি করে দেয় সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু আমার পিতার টাকা না থাকায় জমিটি অন্য জায়গায় বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সংস্থার সদস্যদের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত আমার পিতা জমি কিনতে বাধ্য হন। কিছু সদস্যদের অনিহার কারণে সংস্থার কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে।
পরবর্তীতে আমার পিতা অনেক চেষ্টা করে সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে থাকেন। এর মধ্যে সাবেক সেনা সদস্য আতোর আলী, জিহাদ আলী, জিল্লুর রহমান, মোকাদ্দেস আলী, আব্দুস সুবহান, বিল্লাল হোসেন, মোকলেছুর রহমান, আব্দুল মালেক, আল ফারুক, হাজী ইসরাফিল, রবিউল ইসলামসহ প্রায় সকল সদস্য তাদের জমাকৃত সঞ্চয় ও লাভ সহ গ্রহণ করেন। যার প্রমাণপত্র আমাদের কাছে রয়েছে।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সদস্যদের টাকা পরিশোধ করে ২০১৮ সালে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। ২০০৫ সালে যখন তারা জমি বিক্রি করে দেয় তখন থেকে অদ্যবধি জমিটি আমাদের দখলে রয়েছে। আমাদের পরিবেশক ব্যবসার পণ্য এখানে রাখা হয়। এটি গোডাউন এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার হয়। সংস্থার সভাপতি হিসেবে আমার পিতা কাজিম উদ্দীন জমি রেজিস্ট্রি দেন আমার মায়ের নামে। মায়ের নামে দেওয়ার কারণ ছিল- আমার মায়ের নামীয় তেরাইল কলেজের সামনে এক বিঘা জমি বিক্রয় করে এই জমি কেনা হয়েছিল। সাবেক সেনা সদস্য জিহাদ আলী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে জমি বিক্রি করিয়ে এই জমি ক্রয় করান।
আমার পিতা সাবেক সেনা সদস্য কাজিম উদ্দীন একজন সহজ, সরল ও সৎ মানুষ। তার সম্পর্কে সকলেই অবগত। একজন সহজ সরল মানুষের মাথার উপর সমিতির সঞ্চয় চাপিয়ে দিয়ে তাকে জমি ক্রয় করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সাবেক সেনা সদস্য জিহাদ আলীসহ যারা এই কাজটি করতে বাধ্য করেছিলেন তাদের কয়েকজন আজ আবার জমি নিয়ে দৌড়ঝাপ করছে যা খুবই দুঃখজনক। একটি জমি ১৭ বছর আগে বিক্রি করে আবার কিভাবে সেই জমি তারা দাবি করেন। বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক।
বৈধভাবে জমি ক্রয় করে তার খারিজ খাজনা দিয়ে আসছি। দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের দখলে রয়েছে। তাই যারা বেআইনীভাবে এখন সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন ।
এদিকে প্রাক্তন সৈনিক সংস্থার অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি একটি সংগঠনের জমি। যেখানে একটি অফিস রয়েছে এবং আমরা যারা প্রাক্তন সৈনিক রয়েছি তারা সাংগঠনিক কার্যকলাপ এখানে বসেই করি। সংগঠনের একটি কার্যালয় বিক্রি করে খেতে হবে এমন অভাবগ্রস্থ মানুষ আমরা নই। বরং কিছু ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে কার্যালয়ের জমি ও ঘর নিজের বলে দাবী করছেন। তিনি আরো বলেন আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। আমরা আইনগত ভাবেই এর জবাব দেব।