গাংনীতে মায়ের পরোকীয় প্রেমিক গ্রাম যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকে (৫২) ধারালো কাস্তে (ধান কাটা অস্ত্র) দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে ছেলে। মারাত্বক জখম নিয়ে যুবলীগ নেতা শফিকুল এখন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার গলায় ৬১ টি, হাতে ১২টি ও শরীরের অন্য অংশে ১৫ টির অধিক সেলাই হয়েছে বলে পারিবারিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকায় গতকাল শুক্রবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত ২ টার দিকে।
আহত শফিকুল ইসলাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার মোকাদ্দেস আলী মহুরার ছেলে। সে হিজলবাড়িয়া গ্রাম যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম একই পাড়ার মামা সম্পর্কের দিন মজুর কৃষক সাবাজুল ইসলামের বাড়িতে ওঠাবসা করেন। এই সুযোগে ওই কৃষকের স্ত্রীর সাথে পরোকীয়ায় লিপ্ত হন শফিকুল। পরোকীয়া প্রেমের জের ধরে গতরাত দেড় টার দিকে শফিকুল ইসলাম সাবজুলের বাড়িতে যান। চুপি চুপি মামী সম্পর্কের প্রেমিকার ঘরে ওঠেন তিনি। এসময় সাবজুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ দেখে ফেলেন। রাতে তার মায়ের ঘরে উঠতে দেখে ফিরোজ ধারালো দেশীয় অস্ত্র কাস্তে নিয়ে বাড়ির প্রধান দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় থাকেন। কিছুক্ষণ পর তার মায়ের ঘর থেকে শফিকুল পালিয়ে যাওয়ার সময় ফিরোজ তাকে জাপটে ধরে। এসময় দুজনের মধ্যে ধস্তা ধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ফিরোজকে জোর করে ফেলে পালানোর সময় ফিরোজের হাতে থাকা কাস্তে তার গলায়, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। এতে শফিকুলের গলায়, হাতে ও বুকসহ বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখম হয়।
ফিরোজ জানান, মায়ের সাথে শফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন পরোকীয়া প্রেম করে আমি গ্রামের মানুষের মুখ থেকে শুনি। আমি বলেছিলাম আমি এসব বিশ্বাস করিনি। যেদিন আমার সামনে তারা পড়বে, সেদিন বিচার করবো। গতরাতে আমি আমার মায়ের পাশের রুমে সুয়ে আছি। ওই সময় জেগে ছিলাম। শফিকুলকে আমার মায়ের ঘরে উঠতে দেখে। বাড়ির প্রধান গেটে (বাঁশের র্যালিং দিয়ে তৈরী) কাস্তে হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে মায়ের ঘর থেকে নেমে আস্তে আস্তে পালিয়ে গেটের সামনে আসা মাত্রই আমি তাকে জাপটে ধরি। সে আমাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তা ধস্তি হয়। এক পর্যায়ে হাতে থাকা কাস্তে দিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করি।
তিনি আরও বলেন, মায়ের সাথে এই ঘটনাটি গ্রামের মানুষের মুখে মুখে। আমি তাদের পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি একাধিকবার জানিয়েছি। শফিকুলকে আমাদের বাড়িতে না আসতে বারবার নিষেধ করেছি। তারপরেও সে শোনেনি। গ্রামের লোকজনও তাকে বারবার নিষেধ করেছেন। তারপরও সে নিষেধ শোনেনি।
এদিকে ওই নারী দাবি করেন, আমার কাছে না আসার জন্য আমি প্রায় এক বছর যাবৎ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারপরেও সে আমাকে বিভিন্নভাবে কু প্রস্তাব দিয়ে আসছে। গতরাতে আমি আমার স্বামীকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে আছি। এই সুযোগে সে জোরপূর্বক আমার কাছে এসেছে। আমি এখন তার বিচার চাই।
এদিকে শফিকুল ইসলামের পিতা মোকাদ্দেস আলী মহুরি ও বোন রহিদা খাতুন শফিকুল ইসলামের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ওই নারী চরিত্রহীন। আমার ছেলেকে মোবাইল ফোনে ডেকেছে, আমার ছেলে তার কাছে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক নারী ও গ্রামবাসি জানান, শফিকুলের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেনা। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে, এলাকার মানুষ শফিকুল ইসলামের বিচার দাবি করেছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তাজুল ইসলাম বলেন, রাতে ঘটনাটি শোনার পর পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। শফিকুল ইসলাম বর্তমানে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।