বাঁচতে হলে এক সাথে বাঁচবো,মরতে হলে এক সাথে মরবো এমন মরনপণ প্রতিজ্ঞা নিয়ে প্রেম করে বিয়ে না করাই প্রেমিকের প্ররোচনায় হারপিক পান করে একাই জীবন দিলো নবম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রী সুম্মা খাতুন (১৫)।
দীর্ঘ আড়াই মাস জীবনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যু হয় সুম্মার। সুম্মা গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের রেজাউল হকের কণ্যা ও হাড়াভাঙ্গা এইসএসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী।
রবিবার সকালে সুম্মার মৃত্যু হলে বিকেলের দিকে মরদেহ গ্রামে এসে পৌঁছায়। সুম্মার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, প্রবিবেশী সাইদুর রহমানের স্কুল পড়ুয়া ছেলে স্বাধীনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুম্মার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়। স্বাধীনের পরিবারকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় সুম্মার পরিবার। বিয়ের বিষয়টি স্বাধীনের পরিবার প্রত্যাক্ষাণ করে।
সুম্মার সাথে কথা হয় স্বাধীনের। দুজনেই প্রতিজ্ঞা করে বিয়ে না হলে দুজনেই এক সাথে হারপিক পান করে প্রেমের ইতিহাস গড়বে। যে কথা সেই কাজ। স্বাধীনের পরিবার থেকে প্রেমে বাঁধা আর চাপাচাপিতে সুম্মা ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয় একই সাথে আত্নহুতি দেয়ার। কথানুসারে গত ২২/৫/২০২২ ইং তারিখে বাথরুমে গিয়ে হারপিক পান করে সুম্মা।
আহত মূমূর্ষবস্থায় সুম্মাকে তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সুম্মার অবস্থা অবনিত হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে অবস্থার আরো অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
দীর্ঘ দুই মাস দশ দিন চিকিৎসাধীণ অবস্থায় ঢাকা শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনিষ্টিটিউট এ্যান্ড হাসপাতালে চিকিসাধীন অবস্থায় রবিবার সকালে তার তার মৃত্যু হয়।
সুম্মার বড় বোন রুপালী খাতুন জানান, স্বাধীন আমার বোন সুম্মার সাথে প্রতারণা করেছে। তারা দুজনে এক সাথে মরার কথা বলে আমার বোন হারপিক পান করে আর স্বাধীন করেনি। স্বাধীন আমার বোনকে মুত্যুর প্ররোচণা না দিলে কখনো আমার বোন হারপিক পান করতো না। আমরা স্বাধীনের উপযুক্ত শাস্তি চাই। সুম্মা মৃত্যুর আগে একটি আত্নহত্যায় প্ররোচনা বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড) দিয়ে যায়।
সুম্মার পিতা রেজাউল হক জানায়, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য আমি একাধিকবার স্বাধীনের বাবার কাছে গিয়েছি। কিন্তুু স্বাধীনের বাবা মেনে নেয়নি। আমার মেয়েকে স্বাধীন মৃত্যু জন্য পত্রিজ্ঞা করেছে। কিন্তু আমার মেয়ে একাই সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে গিয়ে আমার বুক খালি হয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি পথের ফকির হয়ে গেছি তবুও আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলামনা। একথা জানাতেই মুর্ছা যায় সুম্মার পিতা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম নাটু জানান, প্রেমের সম্পর্কের কারনে মেয়েটি দুই মাস আগে হারপিক পান করেছিল। এতে তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হলো।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, আমি এঘটনা শুনেছি। গ্রামের মানুষও বিভিন্ন ভাবে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা করেছে। কিন্তু যার জন্য মেয়েটি আত্নহত্যা করলো সেই পরিবারের লোকজন একটু সহযোগীতা বা সহানুভুতি দেখাইনি। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার আর অবতারন দেখতে চাইনা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।