চার ছেলের নামে সব জমি লিখে দিয়ে বৃদ্ধা প্রবীণ দম্পত্তির ঠাঁয় মিলেছে এখন হাসপাতালের বেডে। বৃদ্ধার মুখের সামনে থেকে ভাতের প্লেট কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছে কুকুরের সামনে। ঝাঁপসা চোখে বৃদ্ধ দম্পতির এখন শুধু হতাশা আর হতাশা।
ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কড়ুইগাছিপাড়া এলাকায়।
অসহায় বৃদ্ধ আমের আলী (৮০) ও তার স্ত্রী জরিনা খাতুন (৭০) বর্তমানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আমের আলী বলেন, আমার প্রায় পাঁচ বিঘা জমি আমার চার ছেলে হেকমত আলী, আব্দুল মতিন, খেজমত আলী ও আচমত আলীকে প্রায় এক বছর আগে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছি। জমি নেওয়ার সময় ছেলেদের সাথে শর্ত ছিল আমাদের ভরণ পোষণের জন্য তারা প্রতি মাসে চার হাজার করে টাকা দেবে। প্রথম মাসে টাকা দিলেও আর তারা আমাদের সে টাকা দেইনি। আমার বাকী ১৩ কাঠা জমি আমার স্ত্রী জরিনার নামে দিয়েছি। সেই জমিটুকুও তারা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিতে চাই। আমি তাদের জমিটুকু লিখে না দিতে চাইলে ছোট ছেলে আজমত আলী কিনে নিতে চাই। এক সময় তারা আমোদের মানুষিক চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি শেষ সম্বলটুকুও তার নামে দিতে চাই। পরে আর দিইনি। সে অপরাধে ভাত খাওয়া অবস্থায় আমার মুখের সামনে থেকে ভাতের প্লেট কেড়ে নিয়ে ফেলে দেই। পরে আমার লেপ কাথা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে সেগুলো কেড়ে নিয়ে আমাকে গলা ধরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।তাই মনের কষ্টে অসুস্থ অবস্থায় দুজন বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
তিনি দু:খ করে বলেন, কত কষ্ট করে তাদের মানুষ করেছি। কখনো তাদের কষ্ট দিইনি। অথচ, আজ কয়দিন বাড়ি থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। একটিবারের জন্যও কেও খোঁজ খবর নেইনি আমাদের।
এদিকে বৃদ্ধা জরিনা জানান, আমার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রির চার লক্ষ টাকাও চার ভাই মিলে নিয়ে নিয়েছে। সেটাও আর ফেরৎ দেইনি।
এ ব্যাপারে সাহারবাটি ৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বর) আকালী জানান, এবিষয়টি নিয়ে আমি ও ওই পাড়ার লোকজন বেশ কয়েকবার শালিস বৈঠক করেছি। প্রতি মাসে এই বৃদ্ধ দম্পত্তিকে চার হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এখানেই খান্ত হয়নি তারা। বৃদ্ধ পিতা মাতাকে প্রায় তারা মারধর করে। কয়েকদিন হলো এবার বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্বাছ আলীও জানালেন একই কথা। তিনি বলেছেন, পিতা মাতার মাত্র ১৩ শতক জমি অবশিষ্ট রয়েছে। সেটাও নেওয়ার জন্য ওই ছেলেরা ফন্দি করছে।
এ ব্যাপারে আমের আলীর ছেলে আলগামন চালক খেজমত আলী জানান, বাবা মা আমাদের কথা মেনে চলেনা কেনো। আমরা তাদের খেতে দিতে চাই। কিন্তু তারা সে খাবার খাইনা। পিতা মাতার এখন জমির কি দরকার। পিতা মাতার জমি প্রসঙ্গ তিনি বলেছেন আমাকে যে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে আমার কাছ থেকে ফেরৎ চাইলে সেটা ফেরৎ দিয়ে দেবো। শুধু আমি না আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও ফেরৎ দিয়ে দেবে। দেখবো কি করে তারা সংসার চালাই।