একের পর এক ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন। গাংনী উপজেলা পরিষদ আয়োজিত মানবিক সহায়তা প্রদান বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তীর উপর তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চলমান মানবিক সহায়তা প্রদানে সরকারী বরাদ্দ কতটুকু এবং কোন ইউনিয়নে কত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা না জানানোর কারণে এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে মানবিক সহায়তা প্রদান সম্পর্কিত এক বৈঠকের আহবান জানানো হয়। বৈঠকে কমিটি উপদেষ্টা সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ খালেক, পৌরমেয়র আশরাফুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সরকারী সহায়তার মোট বরাদ্দ এবং কোন এলাকায় কতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা উপদেষ্টা পরিষদকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ এ সাংসদের। চলমান কর্মকান্ডে ইউএনও স্বীয় ইচ্ছায় বরাদ্দ প্রদান করছেন মর্মে অভিযোগ করেন এমপি খোকন।
গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জণ চক্রবর্তী বিতরণকৃত মানবিক সহায়তা প্রদানের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, উপজেলায় ২২ হাজার পাঁচশ ২২ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এসময় সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও বলেন, তিনি একহাজার ২০০ জনকে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি জানেন। আর অন্য কোথায় কাকে কত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটা জানানো হয়নি কেন তার প্রশ্ন ছুড়ে দেন।
একই সময়ে বেশ কয়েকজন অনুষ্ঠানটিতে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকলে এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন তা বারণ করেন। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ খালেক সাহিদুজ্জামান খোকনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনগনের যা জানার তা ইতোমধ্যেই জেনে গেছে যে, ইউএনও আপনার কতটুকু মুল্যায়ন করেছে। এখন ভিডিও করতে নিষেধ করে লাভ কি ?
এদিকে ইউএনও দিলারা রহমান বলেন, বরাদ্দের বিষয়টি এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনকে সব সময় চিঠি দিয়ে জানানো হয়। ছোট খাট ভুলত্রুটি থাকলে বিষয়টি দেখা যাব। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, শুধু তার জন্য যতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয় সে ব্যাপারেই চিঠি দিয়ে জানানো হয়।
এদিকে চলমান করোনা ভাইরাস জনিত (কোভিড-১৯) কারণে কর্মহীন ২২৫২২টি পরিবারের মাঝে মোট ৩০৯.৪৭ মেট্রিকটন চাউল এবং নগদ ৫৪২৫০০/- টাকার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর, ভ্যানচালক, চা দোকানদার, শ্রমিকসহ সাধারণ দুস্থ পরিবারকে এ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে সংশ্ষ্টি সুত্রে জানিয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত এই ত্রাণ সহায়তা পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের মাধ্যমে উপজেলায় বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া পৌরসভাসহ উপজেলার সকল ইউপিতে ১ হাজার পরিবারের মাঝে শিশুখাদ্য হিসেবে ৪শ’ গ্রাম করে গুঁড়া দুধ বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট বরাদ্দ থেকে সংসদ সদস্যকে ১৪.৬২৫ মে. টন চাল ও ৯১৭৫০/, উপজেলা চেয়ারম্যান ২০.১২৫ মে. টন চাল ও ৯১৭৫০/, গাংনী পৌরসভা ২৮.৮০ মে. টন চাল ও ৩৫৯০০/, কাথুলী ইউপিতে ২৪.৮১ মে. চাল ও ৩৫৯০০/, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপিতে ২৫.৩০৫ মে. টন চাল ও ৩৫৯০০/, কাজীপুর ইউপিতে ৩০.৫৭৫ মে. টন চাল ও ৩৮১০০/, বামুন্দি ইউপিতে ২৪.৯৩ মে. টন চাল ও ৩৫৯০০/, মটমুড়া ইউপিতে ৩১.৪০ মে. টন চাল ও ৩৮১০০/, ষোলটাকা ২৪.৫০৫ মে. টন চাল ও ৩৩৭০০/, সাহারবাটি ইউপিতে ২৪.৪৩ মে. টন চাল ও ৩৩৭০০/, ধানখোলা ইউপিতে ৩১.৮৩৫ মে.টন চাল ও ৩৮১০০/, রাইপুর ইউপিতে ২৪.১৬ মে. টন চাল ও ৩৩৭০০/, আবাসন প্রকল্পসমূহে ১.৭২ মে. টন চাল এবং অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে ২.৫০ মে. টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারেরর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধি করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেকারনে ত্রাণ-মন্ত্রনালয় কর্র্তৃক প্রত্যক পরিবারকে ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে গাংনী উপজেলায় ৯ টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহয়তা প্রদান করা হবে।