মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর খামখেয়ালিপনায় প্রায় সাত শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন আঞ্চলিক মহাসড়কটি মুল নকসা বাদ দিয়ে যেনোতেনোভাবে নির্মাণের পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি মুল নকসা অনুয়ায়ী করার দাবি জানিয়েছেন মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহা: আব্দুস সালাম।
গত শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে এ দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি নির্মাণে সরকার প্রায় সাত শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সাত শ কোটি টাকা ব্যায়ের সড়ক ও জনপথের যায়গার উপর মুল নকসা অনুযায়ী আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি নির্মাণ না হলে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়া বেহায়েত হয়ে থাকবে সড়ক ও জনপথের জমি।
কি আছে মুল নকসা?
গাংনী মহিলা কলেজ মোড় থেকে হাটবোয়ালিয়া রাস্তার সংযোগ সড়ক। মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া রাস্তা চার লেন সড়ক এবং কুষ্টিয়া থেকে হাটবোয়ালিয়া রাস্তার সংযোগ সড়ক। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া এবং হাটবোয়ালিয়া রাস্তার মোহনায় ত্রিভুজ আকৃতির ইন্টারসেকশন। সামনে বাসস্ট্যান্ড ও রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার। সড়কটি নির্মিত হবে ত্রিশ ফুট চওড়া ও রাস্তার মাঝখানে দুই মিটার ডিভাইডার। হাটবোয়ালিয়া সড়কের পশ্চিমে প্রায় ৯৫ ফিট দুরে গিয়ে ইন্টারসেকশনের মাথায় নির্মিত হবে যাত্রীদের জন্য বাস স্ট্যান্ড। নকসা অনুযায়ী মেহেরপুর প্রান্তের ইউটার্ন হবে কাথুলি মোড়ের কাছাকাছি ও কুষ্টিয়া প্রান্তের ইউটার্ণ হবে গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি।
সড়ক ও জনপথের এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ১৯৬৩/৬৪ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমি অধিগ্রহণকৃত এসএ ২১৫৬, ২১৫৭, ২১৫৫, ২১৪৩, ২১৫০, ২১৪১, ২১৪২, ২০৯৬, ২০৯৫, ২০৯৪, ২২১৯, ২২১৭, ২২০৮, ২২০৬, ২১৫১, ২১৪৪, ২০৯৭, ২১৪৯ দাগে হওয়ার কথা। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগের এসব দাগ নম্বরের অধিগ্রহণকৃত জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে থাকলেও সেটা উদ্ধার করেনি। আঞ্চলিক এই সড়কটি নির্মাণের পূর্বে ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি অজ্ঞাত কারনে উচ্ছেদ করেনি। অভিযোগ উঠেছে সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ার পাপ্পু হোসেন মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে দখলদারদের কাছে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি রেখে দিয়েছেন। এখন রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে সড়ক বিভাগ তাদের নিজস্ব ভূমি অবৈধ দখলদারদের কাছে রেখে মেহেরপুর জেলা পরিষদের যায়গায় করার পায়তারা চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহা: আব্দুস সালাম জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় তুলে ধরেন। সেখানে তিনি সাত শ কোটি টাকা ব্যায়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মুল নকসা অনুয়ায়ী করার দাবি জানান।
গাংনী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব জমি ফেলে রেখে জেলা পরিষদের যায়গা অবৈধভাবে দখল করে গাংনী উপজেলা শহরে রাস্তা নির্মাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে করে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হবে। ফলে রাস্তার কাজ যেমন আইনি জটিলতায় আটকে যাবে। তেমনি রাস্তার সৌন্দর্যেরও হানি ঘটবে। তিনি আরও বলেন, সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা অবৈধ এই কাজ করতে গেলে গাংনী বাজার কমিটির পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেবো।
জানা গেছে, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা, সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী (এসডি) মিজানুর রহমান ও তাদের সার্ভেয়ার গাংনী উপজেলার তেরাইল বাজারের পাশে কলেজ শিক্ষক কামরুল ইসলামের জমি অবৈধভাবে দখল করে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালান। পরে জমির মালিক কামরুল ইসলাম এই তিনজনের বিরুদ্ধে মেহেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে কামরুল ইসলামের যায়গা ছেড়ে দিয়ে সড়ক বিভাগের নিজস্ব যায়গায় রাস্তা নির্মাণ করছেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিমত সড়ক ও জনপথ বিভাগের খামখেয়ালিপনা বন্ধ করে তাদের নিজস্ব জমির উপর দিয়ে সাত শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করুক। নাহলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে এলাকাবাসি।