মেহেরপুরের গাংনী বাজারের কাথুলী মোড়ে চপল মোবাইল সেন্টারে একটি মোবাইল সারাতে করতে দেন এক গৃহবধূ। পরে সেই মোবাইল থেকে গৃহবধূর ব্যক্তিগত একান্ত মুহূর্তের ছবি সরিয়ে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব ও হুমকি দেয় মোবাইল সেন্টারের মালিক।
গতকাল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশ দুজনকে আটক করলেও গভীর রাতে তাদের ছেড়ে দেয়। এতে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার পরিবারসহ বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে আটকদের বিরুদ্ধে আইন বহির্ভূত কিছু না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সুত্রে জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে গাংনী বাজারের কাথুলী মোড়ে চপল মোবাইল সেন্টারে একটি মোবাইল মেরামত করতে দেন ওই গৃহবধূ। সে সময় তাকে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে বলে জানান দোকান কর্মচারী সাইফ উদ্দীন। পরে ফোনটি গৃহবধূকে দিয়ে দেয় সে। গত পাঁচ দিন আগে গৃহবধূর ছবি দিয়ে নাবিল নামের একটি ফেসবুক আইডি খুলে ওই গৃহবধূর কাছেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। ভুক্তভোগী গৃহবধূ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। পরে নাবিল নামের আইডি থেকে ওই গৃহবধূর মেসেঞ্জারে তার স্বামীর সাথে থাকা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি পাঠায় ও কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব না মানলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়।
বিষয়টি ভুক্তভোগী তার পরিবারকে জানালে তারা মেহেরপুর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যান এবং গাংনী থানায় একটি জিডি করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে গৃহবধূর পক্ষের লোকজন ফুঁসে ওঠে। বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে ও ঘটনা পর্যালোচনা করে ওই গৃহবধূর পরিবার গতকাল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা রাতে চপল মোবাইল সেন্টারের মালিক চপল ও কর্মচারী সাইফকে প্রমাণসহ হাতে নাতে ধরতে সক্ষম হয়। এ সময় উভয়পক্ষ বাক-বিতণ্ডতায় জড়িয়ে পড়লে গাংনী বাজার কমিটির লোকজন চপল ও তার কর্মচারী সাইফ উদ্দীনকে বাজার কমিটির অফিসে নিয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেলেও গভীর রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গৃহবধূর স্বামী জানান, আমার স্ত্রীকে ভয়েজ কলে রাতে গোপনালাপ করার প্রস্তাব দেওয়া হতো এবং কথা না বললে তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। এসব ভয়েজ রেকর্ড ও ভুয়া ফেসবুক আইডি পুলিশকে দেওয়া হয়। সেই সাথে গত শুক্রবার রাতেই মামলা করার জন্য একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ আমলে না নিয়ে আটকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন গোটা পরিবারই হুমকির মুখে।
বিষয়টি নিয়ে গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী বলেন, অভিযোগকারী যে আবেদন ও ধারা উল্লেখ করেছেন সেটি পর্নোগ্রাফি আইন। কিন্তু আটকদের অপরাধ ওই আইনে নয়। এদের কাছ থেকে তেমন কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডর প্রমাণও মেলেনি। তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গৃহবধূর পক্ষ থেকে যে জিডি করা হয়েছে তা তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হলেও, গৃহবধূর জিডি’র তদন্ত করা হচ্ছে। কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।